ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত জাবি শিক্ষার্থী

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  জাবি প্রতিনিধি:

রাতে টিউশন থেকে ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী রাসেল হোসাইন।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন সিএন্ডবি থেকে মীর মোশারফ হোসেন হল গেইট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫০ ব্যাচের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়।

ভুক্তভোগী রাসেলের বন্ধু শাহরিয়ার জানান, রাত আটটার কিছু আগে কলমা এলাকা থেকে টিউশন থেকে ফিরছিলেন রাসেল। পরে সিএন্ডবি থেকে গাড়ি না থাকায় হেঁটেই হল গেইটের দিকে আসছিলেন তিনি। হলের গেটে পৌঁছার মাত্র কয়েক গজ দূরে থাকাকালীন রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে ছিনতাইকারীরা তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। তার সাথে থাকা টিউশনির ৯ হাজার টাকা এবং কিছুদিন আগে কেনা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়৷ যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে পালিয়ে যায়। ১৫ মিনিটের মতো সেখানে অপেক্ষা করে কাউকে না পেয়ে তিনি নিজেই রিক্সায় চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে আসেন। তিনি কোমরের ডান পাশে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। আঘাতস্থলে তাকে ৩ টি সেলাই দেয়া হয়েছে বলে জানান চিকিৎসা কেন্দ্রের ডা. রিফাত৷

ভুক্তভোগী রাসেল জানান, টিউশনির টাকা দিয়ে নিজের হাত খরচ চালান তিনি৷ টিউশনির একসাথে পাওয়া ২ মাসের বেতন নিয়ে আসছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ছিনতাইকারীরা ছিল অল্পবয়সী, সংখ্যায় ছিল ৩ জন। তারা প্রথমে এসে গলায় শক্ত করে ছুরি ধরে৷ আমার শ্বাস একেবারে বন্ধ হয়ে আসছিলো। সাথে সাথে আমি সব দিয়ে দেই। আমি যাতে আর কাউকে ডেকে আনতে না পারি, সেজন্যে যাওয়ার সময় আমার কোমরে একটা কোপ দিয়ে যায় ওরা।'

রাসেলের মানিব্যাগে জাতীয় পরিচয় পত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিয়পত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল বলে জানান তিনি। মোবাইল হারিয়ে তিনি কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরে আহত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট করলে সবাই সাহায্যের জন্য ছুটে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ডা. রিফাতের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও সেলাই করা হয়। তার কোমরের পেছনে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে তিনটি সেলাই করা হয়৷ পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম, রবীন্দ্রনাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল সেখানে উপস্থিত হন।

এনাম মেডিকেলের অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. আ. তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকেই আর তাকে জীবাণুনাশক এটিএস দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা এখানে নতুন করে সেটা ওপেন করলাম না। ২৪ ঘন্টা আমাদের অবজারভেশনে রাখার জন্য তাকে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা খবর পেয়ে দ্রুততম সময়ে সেখানে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারও যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। তার অবস্থা এখন অনেকটা স্টেবল। তারপরও আমরা তাকে হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা রাখার পরামর্শ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আমরা সচেষ্ট আছি।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ওই এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং পুলিশ বক্স স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। সাভার সার্কেল পুলিশের সাথে এ নিয়ে দুবার আলোচনা হয়েছে। আজকে দ্বিতীয়বার  পুলিশের সাথে কথা বললাম। ৭-৮ দিন আগেও একবার এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম। আগামীকাল দশমী উদযাপিত হবার পর এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হবে বলে আশা রাখছি।’


আমার বার্তা/সৌরভ শুভ/এমই