সাজিদের খুনি শনাক্ত না হলে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২৮ | অনলাইন সংস্করণ
ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন জিয়া পরিষদ, সাদা দল ও গ্রীন ফোরামের শিক্ষকরা একাত্মতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও মানববন্ধনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই মানববন্ধনের করে তারা। এসময় আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করতে না পারলে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ও প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখানোর হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘আজকে ৪ মাস ২৫ দিন বিচার হবে কবে?; ১৪৫ তম দিনেও কি প্রশাসনের টনক নড়ে না; সাজিদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ কই?; তদন্ত ঠিক কতদূর?; স্যার প্লিজ সন্তান ডাকিয়েন না; ভাইয়ের লাশ কবরে খুনি কেন বাহিরে; শিক্ষার্থীরা আপদ খুনিরা নিরাপদ” ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ইবি ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, গ্রীন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।
এছাড়াও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ইউসুব আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এস এম সুইট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত ও তালাবায়ে আরাবিয়ার সেক্রেটারি এস এম শামীমসহ অন্যান্য নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, সাজিদ আবদুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে এটা প্রমাণিত। কিন্তু কোন জুজুর ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ সিআইডি প্রশাসন খুনিদের গ্রেফতার করতে পারছে না এর জবাব ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারারকে দিতে হবে। প্রতিনিয়ত আমাদের বলা হয় সিআইডি আসছে ব্রিফিং করবে, আগামীকাল ও নাকি ব্রিফিং করবে, এই ব্রিফিং ব্রিফিং নাটক বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা লাল কার্ড দেখাতে বাধ্য হব প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত এই ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রাখা হবে। আমরা সেই শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্টট আমল চাইনা। আপনারা বাংলোতে আরামে থাকবেন, পতাকাবাহী গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন এটা আমরা দেখতে চাই না। সাজিদের খুনিদের কতদিনের মধ্যে গ্রেফতার করবেন সেই প্রস্তুতি নেন, না হলে আপনাদের পরিণতি কতটা খারাপ হবে সে জন্য প্রস্তুত থাকুন।
গ্রিন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির সদস্য ছিলাম। আমরা নির্ধারিত সময়ে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। ভেবেছিলাম রিপোর্ট দেওয়ার পরে দ্রুত একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিচার দাবিতে এখনো ছাত্রদেরকে আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সিআইডি কেন প্রকৃত সত্য সামনে আনতে পারছে না। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, “সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করছি। যতদিন বিচার না হবে ও খুনিরা গ্রেফতার না হবে, ততদিন এই আন্দোলনের সঙ্গে থাকব। আমি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিতে ছিলাম এবং দ্রুতই রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম। আমাদের ধারণা ছিল, সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচারও দ্রুত হবে। কিন্তু ১৭ তারিখে এ হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে। একজন খুনিকে ধরতে পাঁচ মাস খুব দীর্ঘ সময়। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, আদৌ বিচার হবে কি না।”
তিনি আরও বলেন, “সাজিদ আব্দুল্লাহ একজন হাফেজ তার হত্যার বিচার না হলে ইবির পবিত্র মাটি কলঙ্কমুক্ত হবে না। খুনিদের চিহ্নিত করতে কোনো সংস্থার এত দেরি হওয়ার কথা নয়। কেউ না কেউ নিজেদের স্বার্থে এ ঘটনার নেপথ্যে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত খুনিদের জনসমক্ষে এনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা।”
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী, সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
আমার বার্তা/এমই
