গণমাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহার বিষয়ে মুক্ত আলোচনা
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:

গণমাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহারে সাংবাদিকদের উৎসাহী করতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ’গণমাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা’ বিষয়ক এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ‘সমতায় তারুণ্য: ইয়ুথ ফর ইকু্য়ালিটি’ প্রকল্পের আওতায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষাবিদ, সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট নির্মাতা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।
নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে চার বছর মেয়াদী সমতায় তারুণ্য প্রকল্পটি বাংলাদেশের আটটি বিভাগে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট।
মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ড. সানজিদা আখতার, অধ্যাপক, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মাশফিকা জামান সাটিয়ার, সিনিয়র পলিসি এডভাইজার- জেন্ডার এন্ড সিভিল সোসাইটি, ঢাকায় নেদারল্যান্ডস এর দূতাবাস; মনিরা শরমিন, সহযোগী অধ্যাপক (অস্থায়ী), প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি); জায়মা ইসলাম, জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, দি ডেইলি স্টার; নিশাত সুলতানা, ডিরেক্টর – ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পইেন এন্ড কমিউনিকেশনস, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। মুক্ত আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সালমা হাসনায়েন, নীলিমা ইয়াসমিন, ডেপুটি ডিরেক্টর-প্রোগ্রাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের সহকারি পরিচালক এশা ফারুক ।
ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, জেন্ডার-সংবেদনশীল প্রতিবেদন তৈ্রির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়েছে। কিন্তু অনলাইনে হয়রানি, সাইবার বুলিং এবং জেন্ডার-অসংবেদনশীল ভাষার ব্যবহারও হচ্ছে। তিনি আরও বলেন গণমাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ আছে, সেন্সরশিপ রয়েছে যা কমানো উচিত। গণমাধ্যমে ভুক্তভোগীদের দোষারোপ করার প্রবণতা আছে সেটিও বন্ধ করা উচিত।
আলোচক ড. সানজিদা আক্তার বলেন, গণমাধ্যমে নারীদের সম্পর্কে অনুমান নির্ভর সংবাদ প্রচারের সাথে সাথেই তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং মানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করে। অনেকসময়ই পরে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয় কিন্তু ততক্ষণে ভুল বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে যায়।
তিনি আরো বলেন যে তৃণমূল পর্যায়ে নারী সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছেন না এবং গণমাধ্যমে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সুষ্টি অপরিহার্য। গণমাধ্যমকর্মীদের জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহারের ব্যাপারে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছ।
ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি এডভাইজার-জেন্ডার ও সিভিল সোসাইটি, মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নারীই কোনো না কোনোভাবে জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন যে বাংলাদেশে দুজন নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বহু বছর, কিন্তু পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে নারীদের খুব তুচ্ছভাবে ও ছোট করে চিত্রায়ন করা হয়, কিন্ত আমরা গণমাধ্যমের কন্টেন্টে নারী-পুরুষের সমান চিত্রায়ন দেখতে চাই।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করে ইংরেজি পত্রিকা দি ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জায়মা ইসলাম বলেন, যে সকল নারী সাংবাদিকতায় টিকে আছেন, তারা ধারাবাহিকভাবে হয়রানির শিকার হন। সংবাদ মাধ্যমগুলো ভয়াবহভাবে পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যদিও সেখানে নারীসহ বিভিন্ন সংস্কৃতি ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব আছে। আছে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলিতে একটি সাইবার সুরক্ষা সেল আছে কিন্তু নারীদের জন্য অবাধ ও নিরাপদ স্থান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাব রয়েছে। জেলা পর্যায়ে নারী সাংবাদিকদের সংখ্যা খুবই কম, এবং তাদেরকে উপেক্ষা করা হয়।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক মনিরা শরমিন বলেন, নেতিবাচক জেন্ডার স্টেরিওটাইপগুলো ভাঙা কঠিন কারণ সেগুলো আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। তিনি আরো জানান, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারীত্বের মাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল সাংবাদিকতার উপর একটি পুস্তিকা এবং তথ্যচিত্র তৈরি করবে এবং ৩০০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে এর ওপর প্রশিক্ষণ দেবে।
নিশাত সুলতানা বলেন "গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ভাষা বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়। ভাষা মূলত আমাদের অনুভূতি, বিশ্বাস ও চিন্তা ভাবনা প্রকাশের মাধ্যম; যা গড়ে ওঠে পরিবার ও সমাজ থেকে। তাই আমাদের মনের ও মগজের পরিবর্তন প্রয়োজন সবার আগে। সমতায় তারুণ্য প্রকল্পের মাধ্যমআমরা ক্ষতিকর প্রথাগুলো পরিবর্তনকরার চেষ্টা করছি।”
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সালমা হাসনায়েন বলেন, আমাদের সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাব রয়েছে। যদি আমাদের একের অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকে, তাহলে আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গণমাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহার করব।" তিনি আরো বলেন, সরকার সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। "আমরা এই ধরণের আলোচনা থেকে সুপারিশ গ্রহণ করব এবং বাস্তবায়্ন করার চেষ্টা করবো।
উন্মুক্ত আলোচনায় গণমাধ্যমকর্মীরা পেশাগত জীবনের নানান অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তারা বলেন, পরিবার থেকে গঠন প্রয়োজন আছে, গণমাধ্যমে নারী-সম্পর্কিত সংবাদকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়েও তারা কথা বলেন। সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে, যেটিকে কমিয়ে দুটো মাধ্যমকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে প্রকল্পের লক্ষিত জনগোষ্ঠী সর্বমোট ১৩,৫১৫ জন। এদের মধ্যে স্থানীয় ২৫২ টি যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনের যুব সদস্য, জাতীয় যুব কাউন্সিলের সদস্যগণ, বাংলাদেশী গণমাধ্যমকর্মী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্ট নির্মাতারা।
আমার বার্তা/এমই