ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিন ব্যাপী মালয়েশিয়ান সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী শুরু

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫, ১৬:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

  রানা এস এম সোহেল:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী মালয়েশিয়ান সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ২০২৫ শুরু হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৭ জুন) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান। ইডটকো বাংলাদেশের  ম‍্যানেজিং ডিরেক্টর সুনীল আইজ্যাক, মালয়েশিয়ার সুলতান ইদ্রিছ এডুকেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিন ও ভাষা ও যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড মোহাম্মাদ তৌফিক আবদ গণি । অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএমএল-এর ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবসার জামাল।

ব‍্যতিক্রমধর্মি ও মনোমুগ্ধকর এক নাচের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় । এরপর পবিত্র কোরআন থেকে সুরা পাঠ ও দোয়া এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয় । 

স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক আবসার বাংলাদেশে মালয় ভাষা শেখার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন এবং তিনি জানান যে আইএমএল এখান থেকে মালয় ভাষা শিক্ষা কোর্স শুরু করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে পর্যটন এবং কর্মশক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই ভালো, তাই ভাষা ও শিক্ষা বিনিময়ও একটি খুব ভালো সুযোগ হতে পারে।

এরপর মালয়েশিয়ার সুলতান ইদ্রিস এডুকেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউপিএসআই) ডেপুটি ডিন ও ভাষা ও যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ তৌফিক আবদ গণি ছাত্র বিনিময় কর্মসূচির গুরুত্ব এবং উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়া একটি ভালো গন্তব্যস্থল হতে পারে বলে উল্লেখ করেন। 

এরপর বাংলাদেশে নেটওয়ার্কিং বিশেষ করে টাওয়ার নেটওয়ার্কিং সিস্টেম জায়ান্ট ইডটকো বাংলাদেশের ম‍্যানেজিং ডিরেক্টর সুনিল আইজ্যাক বাংলাদেশে তার কাজ করার দারুণ অভিজ্ঞতা ব‍্যক্ত করেন ।তিনি বলেন, “ বাংলাদেশে আমরা সংযোগের একটি জীবন্ত উদাহরণ হতে পেরে গর্বিত। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ভূদৃশ্যের সাথে গভীরভাবে জড়িত মালয়েশিয়ান-প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হিসেবে, আমরা ১৮,০০০ এরও বেশি টাওয়ার নির্মাণ করেছি, লক্ষ লক্ষ লোককে সংযুক্ত করেছি, কর্মসংস্থান তৈরি করেছি এবং দেশজুড়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন করেছি।” 

তিনি আরো বলেন, ” কিন্তু উঁচু ভবন এবং প্রযুক্তির বাইরে ও আমাদের যাত্রাকে সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী করে তোলে এখানকার মানুষ।আমরা বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে মূল্য দিই এবং আমরা আমাদের মালয়েশিয়ার শিকড়ের জন্য সমানভাবে গর্বিত। সংস্কৃতির এই মিশ্রণেই আমরা শক্তি, বোধগম্যতা এবং উদ্ভাবন খুঁজে পাই।”

বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার জনাব মোহাম্মাদ সুহাদা ওসমান সম্মানিত অতিথি হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল বক্তব্য রাখেন। তিনি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং ছাত্র কর্মসূচি বিনিময়ের গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি আরও বলেন যে ঢাকায় দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আগের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ।

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “মালয়েশিয়া হল বিভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি এবং আদিবাসী প্রভাবের একটি মিশ্রণ যা শতাব্দী ধরে সুরেলাভাবে সহাবস্থান করে আসছে, ঐতিহ্য, শিল্প এবং রীতিনীতির একটি সত্যিকারের অনন্য টেপেস্ট্রি তৈরি করে। এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য হল আপনাকে এই প্রাণবন্ত ঐতিহ্যের এক ঝলক দেখানো।”

তিনি আরও যোগ করেন যে, “আমরা বিশ্বাস করি যে সাংস্কৃতিক বিনিময় জাতিগুলির মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আমাদের সাংস্কৃতিক আখ্যান ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে, আমরা সংলাপের দরজা খুলে দেই, বন্ধুত্বের সেতু তৈরি করি এবং আমাদের ভাগ করা মানবতার প্রতি আমাদের উপলব্ধি আরও গভীর করি। এই প্রদর্শনী কেবল মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি প্রদর্শনের জন্য নয়; এটি সংযোগ বৃদ্ধি, কৌতূহল জাগানো এবং আমাদের চারপাশের বিশ্বের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করার বিষয়ে।”

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের এই প্রদর্শনীর প্রতিটি দিক অন্বেষণ করার জন্য উৎসাহিত করেন । তিনি বলেন আপনারা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন, প্রদর্শনীর সাথে জড়িত হন এবং অভিজ্ঞতায় নিজেকে নিমজ্জিত করুন।

তিনি এই সুন্দর আয়োজনে পাশে থাকার জন্য ইডটকো এবং বাটিক এয়ার কে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ।

সেই সঙ্গে সেন্টার ফর গ্লোবাল স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি পেন্ডিডিকান সুলতান ইদ্রিস (ইউপিএসআই) এবং ইনস্টিটিউট অফ মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মালয় ভাষার কোর্স চালু করতে পেরে আনন্দিত বলে জানান। তিনি এই কোর্স শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ভালো এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন । তিনি তার বক্তব্যে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সুদীর্ঘ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন এবং মালয়েশিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মুসলিম বিশ্বের প্রথম স্বীকৃতি দানকারি দেশ হিসাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।

সবশেষে আগত সকল অতিথিদের জন্য বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয় ।

আমার বার্তা/এমই