ঝিনাইদহে ৮ হত্যা মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামি

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের সাবেক চাকরিচ্যুত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন ৮টি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহে একের পর এক হত্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। বলা যায় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। তার বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চাকরিচ্যুত এসপি আলতাফের সঙ্গে আসামি হয়েছেন পুলিশের আরও ৪৩ সদস্য।

এরমধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার. ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), এসআই, এএসআই, কনস্টেবল ও ডিবি পুলিশের ওয়াচার। এজাহারে এক ব্যক্তি একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোর স্বজনরা বাদী হয়ে ঝিনাইদহের বিভিন্ন আদালতে এসব হত্যা মামলা করেন। তবে এখনো কোন পুলিশ কর্মকর্তা এ সব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হননি বলে জানা গেছে।

এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি এ সব হত্যা মামলায় ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার ১৫৯ জন আ.লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াত নেতা আব্দুস সালাম হত্যা ও বিএনপি নেতাদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আ.লীগের ৮০৭ নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন। আসামির তালিকায় ঝিনাইদহের সাবেক পাঁচ সংসদ সদস্য রয়েছেন।

জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় সরকার বিরোধী আন্দোলন দমাতে পুলিশ ও আ.লীগ নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে ক্র্যাকডাউন শুরু করে। বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের সাংগঠনিক দক্ষতা আছে এমন সব নেতাকর্মীদের টার্গেট করে হত্যার উৎসবে মেতে ওঠে।

২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪০ জনকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরমধ্যে ৩০ জনকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে অনেক সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদলের সদস্যও ছিল।

২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি ঢাকার ৫৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবাজার মার্কেট কমিটির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ঘটনার দিন র‌্যাব পরিচয় দিয়ে রফিকুলকে শৈলকুপা উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের ভাইরার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়িয়া মনোহরপুর খালপাড়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার এখনো কোন মামলা করেনি।

তবে ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যার ঘটনায় ৮টি হত্যা ও ৩টি ভাঙচুরের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৭ আগস্ট জামায়াত কর্মী আব্দুস সালাম হত্যা মামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ ৭০ জন, ২৯ আগস্ট যুবদল নেতা মিরাজুল ও শিবির নেতা ইবনুল পারভেজ হত্যা মামলায় ১১ পুলিশসহ ২৮ জন, ১ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা ইদ্রিস আলী পান্না হত্যা মামলায় ৬ পুলিশসহ ২৯ জন আসামি, ১১ সেপ্টেম্বর শিবির নেতা সাইফুল ইসলাম মামুন হত্যা মামলায় ৯ পুলিশসহ ১৪ জন, ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা এনামুল হত্যা মামলায় হত্যা মামলায় ৫ পুলিশসহ ১৯ জন, ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা ও ইউপি সদস্য হাফেজ আবুল কালাম আজাদ হত্যা মামলায় হত্যা মামলায় ৩ পুলিশসহ ১৯ জন, ১৮ সেপ্টেম্বর শিবির নেতা আবুজার গিফারী ও শামিম হত্যা মামলায় হত্যা মামলায় ৮ পুলিশসহ ২৩ জন, ১৯ আগস্ট বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় ৪৬৮ জন আ.লীগ নেতাকর্মী, ২৫ আগস্ট ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলায় ২৩৮ জন ও বিএনপি নেতা আক্তারের দোকান ভাঙচুর মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

তবে জেলার আইন কর্মকর্তা (পিপি) অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন জানান, এ সব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ঘটনার পরপরই সে সময় অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। এখন নতুন করে এসব মামলার তদন্তে যদি পুলিশ কর্মকর্তারা দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তারা আইনের আওতায় আসতে পারেন।


আমার বার্তা/এমই