মাগুরায় জালিয়াতির মাধ্যমে মাদ্রাসায় চাকরি নেয়ার অভিযোগ

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  মোঃ তারিকুল ইসলাম তুহিন (মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি)মাগুরাঃ

জালিয়াতি করে মাদ্রাসায় চাকরি

মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নের শত্রুজিৎপুর নূরুল ইসলাম দাখিল মাদরাসার আঃ রব নামক এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ বছর বয়স কমিয়ে  জালিয়াতি ও প্রতারনার মাধ্যমে চাকুরী করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আঃ রব বহাল তবিয়াতে দীর্ঘ বছর চাকরি করে যাচ্ছে শত্রুজিৎপুর নূরুল ইসলাম দাখিল মাদরাসা এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক হিসাবে।

নভেম্বর শুরুর দিকে অনুসন্ধানে নামে সাংবাদিকদের একটি দল, সকল প্রমান হাতে নিয়ে গত ২০ নভেম্বর মঙ্গলবার মাদ্রাসায় গেলে সাংবাদিকদের দেখে  তার রুটিন মাফিক ক্লাস থাকলেও  ৩ টার সময় ক্লাস না নিয়ে সুপার কে না জানিয়ে পালিয়ে যান তখন সন্দেহ হয় সাংবাদিকদের এবং বেরিয়ে আসে তার জালিয়াতি ও প্রতারণা রহস্য। 

চলতে থাকে আঃ রব মোল্যার জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনুসন্ধান পাওয়া যায় তার দুই বার জন্ম তারিখ  একটা ১৯৭৭ সালে যখন এস,এস সি পাশ করেছেন।তখন জন্ম তারিখ ১০/১০/১৯৬১সাল দেখিয়েছেন এবং পরবর্তী তে চাকরীলোভী আঃ রব ১৯৯৫ সালে দাখিল সার্টিফিকেটে বয়স দেখিয়েছেন ১০/১০/১৯৭১ইং তাহলে ঐ চাকুরী লোভী প্রতারক এবতেদায়ী ক্বারি শিক্ষক  আঃ রবের এই পৃথিবীতে দুইবার জন্ম হয়।
এরই সূত্রে ধরে এগোতে থাকে অনুসন্ধান কারীদল বেরিয়ে আসে আসল প্রকৃত থলের বিড়াল,মাচার তলে কেরে আমি গুড় খাই নাই,এমন বক্তব্য চাকুরী পিপাসু আঃ রব মোল্যার তারই জালিয়াতী ও প্রতারনার চিত্র ছিল এক ভয়াবহতা আঃ রব এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক হওয়ার পূর্বে ১৯৭৭ সালে রাঘবদাইড় ইউনিয়নের লক্ষীপুর বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন, তথ্যে পাওয়া যায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার স্বারকে চাহিদা মোতাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এর স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনের হুবহু তুলে ধরা হইল।

 লক্ষ্মীপুর বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিতঃ ১৯৪০ ইং ইনডেক্স নং ১১৭৯১৫ ডাকঘর- ধনেশ্বরগাতী, থানা ও জেলা- মাগুরা। স্মারক নংঃ লবামাবি/মাস/২০২৪/১৮, তারিখঃ ১৭/১১/২০১৪ ইং বরাবর, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাগুরা সদর, মাগুরা, বিষয়ঃ এস,এস,সি'র সনদ যাচাইপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ প্রসঙ্গে। সূত্রঃ উমাশিঅ/মাস/২০২৪/২৮৭, তারিখঃ ১৩/১১/২০২৪ ইং এর প্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হলো। উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোকে নিম্নলিখিত ব্যক্তির এস.এস সি- ১৯৭৭ এর সনদ এর তথ্য প্রেরণ করা হলোঃ নাম- মোঃ আঃ রব, পিতার নাম- গোলাম ছবদার মোল্যা, গ্রাম- রাঘবদাইড়। এস.এস.সি রোল: ৯০৫, বিভাগঃ তৃতীয়, পাশের সালঃ ১৯৭৭, প্রমাণপত্র নম্বরঃ ১৪৮৯২৮, জন্ম তারিখঃ ১০/১০/১৯৬১ ইং (দশ অক্টোবর উনিশশত একষট্টি)। ৬০ বছর এবং বর্তমানে চাকরীর প্রতিষ্ঠান যেখানে তার জন্ম তারিখ দেখান এই রব মোল্যা,  মাগুরা সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসা হতে ১৯৯৫ সালে দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রমানার্থে তুলে ধরা হইল। 

প্রমাণ পত্র তাং ০৯/০৯/৯৫ সালে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় ১৯৯৪/১৯৯৫ শিক্ষা বর্ষে ব- ১০৮৮ নিবন্ধন সংখ্যায় অংশ গ্রহণ করিয়া দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হইয়াছে। ভর্তি বহি অনুযায়ী তাহার জন্ম তারিখ ১০/১০/১৯৭১ ইং।
বর্তমানে চাকুরীরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর নিয়োগ পত্রের দালিলিক প্রমাণ তুলে ধরা হইল। 
শত্রুজিৎপুর নূরুল ইসলাম দাখিল মাদরাসায় মোঃ রব মোল্লা, গ্রাম- রাঘবদাইড়, পোঃ বেঙ্গা বেরইল, থানা ও জেলা- মাগুরা। এই মাদ্রাসায় রব মোল্লার নিয়োগ ও চাকরির যোগদান এর বিস্তারিত তথ্য ও সময়-তারিখ বিষয়- এবতেদায়ী ক্বারী পদে (দাঃ মুজাব্বিদ) নিয়োগ প্রসংগে। এত দ্বারা আপনাকে জানানো যাইতেছে যে গত ইংরাজী ০১-০১-৯৬ তারিখে ইন্টারভিউ এর ভিত্তিতে আপনাকে মাদ্রাসার ক্বারী শিক্ষক (দাঃ মুজাব্বিদ) নিয়োগ করা হইয়াছে এবং আগামী ২০-০১-৯৬ ইংরেজি তারিখের মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে এসে উক্ত পদে যোগদানের জন্য অনুরোধ করা গেল। সুপারিন্টেন্ডেন্ট ২-১-৯৬। বিষয়- চাকুরীতে যোগদান প্রসঙ্গে। আপনার নিয়োগপত্র নং তাং ০১-০১-৯৬ অনুসারে অদ্য ইংরেজি ১০/১/৯৬ তারিখে সকাল ১০ টার সময় আপনার মাদ্রাসার যোগদান করিলাম। সত্যায়িত সাক্ষর মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ জামিরুল ইসলাম। 

এবিষয়ে শত্রুজিৎপুর নূরুল ইসলাম দাখিল মাদরাসার সুপার মোঃ আখতার হোসেন বলেন, অত্র প্রতিষ্ঠানের এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক মোঃ আঃ রব মোল্লা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূন্যের মাধ্যমে চাকুরীতে যোগদান করেন।
১৯৭৭ সালে লক্ষীপুর বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ছিলো এটা আমার জানা ছিলো না। সে ১৯৯৫ সালের দাখিল মাদরাসা থেকে এসএসসি পাস করা সার্টিফিকেট দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছে।

এবিষয়ে এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক মোঃ আঃ রব মোল্লার কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি কোন সদোত্তর না দিয়ে ছলচাতুরী মূলক কথাবার্তা বলে।

১৯৭৭ সালে পাশ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লক্ষীপুর বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোঃ আঃ রব ১৯৭৭ সালে অত্র বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। 

শত্রুজিৎপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি ওসমান গনি মুছাপুরী বলেন, আমি কোন অন্যায় কাজের পক্ষপাতিত্ব করিনা তবে ঘটনাটি আমি প্রথম শুনলাম এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষককে নিয়ে তবে এটা সঠিক কাজ নয়।

মাগুরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুর রহিম জানান, কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য বয়স কমিয়ে পুনরায় সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করা হলো একটা জালিয়াতি মূলক ধান্দা ও প্রতারণার শামিল। যেটা শত্রুজিৎপুর নূরুল ইসলাম দাখিল মাদরাসার কর্মরত এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক মোঃ আঃ রব মোল্যা করেছে। তার আসল জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯৬১ সালে এই সাল অনুযায়ী বাংলাদেশের যে কোন চাকরিতে বয়স শেষ হবে গত ৯ অক্টোবর ২০২১ সালে। এটা চরম অন্যায় ও অপরাধ মূলক কর্মকান্ড যেটা আইনের পরিপন্থী কাজ।