রাজশাহীতে গরমে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ১০:৩১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব। লক্ষণ ছাড়া টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের প্রবণতাও বেড়েছে। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। গেল কয়েকদিন থেকে রাজশাহীতে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকছে ৩৭ ডিগ্রির বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে- শনিবার (১৪ জুন) রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যা ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৬৮ শতাংশ। এছাড়া শুক্রবার (১৩ জুন) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ছিল ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চিকিৎসকরা বলছেন- গরমের কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন ও গরমের কারণে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গেল ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৪৯ জন রোগী। এর মধ্যে ১২ জন শিশু ও ২৫ জন বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ রয়েছে। ডায়রিয়া, জ্বরে আক্রান্ত রোগী প্রতিনিয়ত ভর্তি হয়। তবে গরমের কারণে কিছুটা বেড়েছে। একই অবস্থা জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও।
হাসপাতালে পেট ডায়ারিয়া ও জ্বর সংক্রান্ত জটিলতায় ভর্তি হয়েছেন সাগর আলী। তার স্বজনরা বলেন, হঠাৎ করে শুক্রবার (১৩ জুন) গভীর রাত থেকে পেটে ব্যথা, জ্বর ছিল। রাতে চিকিৎসক দেখেছে। সকালে চিকিৎসক আবার বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট চিকিৎসক দেখলে বোঝা যাবে কি সমস্যা হয়েছিল।
রাবেয়া খাতুন বলেন, তার শ্বশুরের বয়স ৫১ বছর। তিনি গরম সহ্য করতে পারেন না। প্রতিবছর গমের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কোরবানির তিনদিন পর থেকে ডায়েরিয়া। হাসপাতালে ভর্তি করার পরে ভালো হয়ে গিয়েছে। পরবর্তিতে জন্ডিস রোগ ধরা পড়েছে। সেটার চিকিৎসা চলছে।
এদিকে দুর্গপাুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে- ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ৭০ জন বিভিন্ন বয়সের রোগী। বেডের অতিরিক্ত রোগী হওয়ায় সংগত কারণেই মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তারা। এদিন হাসপাতালটির বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৫০ জন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত দুইজন নার্স জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তন ও জ্যৈষ্ঠের তীব্র গরম বেড়েছে। গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, পেটের পিড়াজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে হিটস্টোক রোগীও রয়েছে।
রোগী কাজেম উদ্দিন বলেন, ‘গত দুদিন আগে হঠাৎ করে আমার বমি ও পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া) শুরু হয়। ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়েছি, কিন্তু অসুখ সারেনি। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বেড না থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ।’
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আসকান আলী বলেন, ‘জমিতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ মাথা ঘুরে ওঠে। এরপর বমি বমি ভাব আর পেট ব্যথা শুরু হয়। কিছুতেই পেটের ব্যথা ভালো হচ্ছিলো না। পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসকরা তাকে বলছেন অতিরিক্ত গরমের কারণে এমন সমস্যা হয়েছে তার।’
ডায়রিয়া কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন উপজেলার পাঁচুবাড়ী গ্রামের সাহিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছিল। সেই কাজে সহযোগিতা করছিলাম। হঠাৎ করে ডায়রিয়া শুরু হয়। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন ও চিকিৎসা নিয়েছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হওয়া চার বছরের শিশুর অভিভাবক বলেন, ‘গেল তিন দিন থেকে আমার মেয়ের শ্বাসকষ্ট। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চিকিৎকরা বলছে শিশুর টায়ফয়েড হয়েছে। সেটার চিকিৎসা চলছে।’
দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, ‘গরমের কারণে হাসপাতালে বেশ কিছু দিন থেকে ডায়রিয়া ও পেটের ব্যাথাজনিত রোগীর ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন ও তীব্র গরমের কারণে সব বয়সের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়া রোগে ভুগছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গরমে ভাজা-পোড়া খাবার কম খেতে হবে। খাবারের আগে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে। অবশিষ্ট খাবার ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। তীব্র গরমে বেশি বেশি পানি ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে।’
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, এই ধরনের সমস্যার রোগী হাসপাতালে প্রতিনিয়তয় চিকিৎসা নেয়। তবে গরমের কারণে কিছুটা বেড়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৯ জন রোগী। এরমধ্যে ১২ জন শিশু ও ২৫জন বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ রয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।
আমার বার্তা/জেএইচ