ভাঙনে নিঃস্ব পদ্মার পাড়ের মানুষ
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আশাড়িয়া দহ, নিমতলি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের পোড়াডাঙ্গাসহ পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, এমনকি মসজিদ ও মাদ্রাসাও। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই অঞ্চলের মানুষেরা।
চর আশাড়িয়া দহর গ্রামবাসীরা দাবি করেছেন, মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে পদ্মার স্রোতে গ্রাস হয়েছে প্রায় দেড় কিলোমিটার ফসলি জমি এবং বসতবাড়ি। অন্তত ১৫টি পরিবার সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
শুধু চর আশাড়িয়া দহ নয়, ভাঙন থেমে নেই গোদাগাড়ীর নিমতলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পোড়াডাঙ্গাসহ একাধিক নদীতীরবর্তী গ্রামে। প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে শতাধিক পরিবার। এরমধ্যেই অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন।
কৃষক মীরাজ উদ্দিন বলেন, ‘চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে কষ্ট করে আবাদ করা ধানের জমি। কিছুটা বাঁচানোর আশায় পুরোপুরি পাকার আগেই তড়িঘড়ি করে কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের দেখার যেন কেউ নেই। কোন নেতা বা সরকারি সংস্থার লোক কেউ আসে না।’
স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, ‘বাড়ি, গোয়ালঘর সব ভেঙে যাচ্ছে। রাতে ঘুম আসে না। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আমরা অনিরাপদ কোথায় যাবো, তা ভেবে আতঙ্কে আছি।’
ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করছেন, এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় বাসিন্দা নূর আলম বলেন, ‘আমাদের বারবার অভিযোগ করেও কেউ শুনছে না। ভাঙন থামানো বা পুনর্বাসন না হলে আমরা আগামী বছরের আগেই নিঃস্ব হয়ে যাব।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর পদ্মায় ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহ হয়েছে। দীর্ঘদিন পানি স্থায়ী থাকার পর হঠাৎ স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের পথে বাজেটের ঘাটতিই বড় বাধা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহী জেলার সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘নদীর স্রোত এইভাবে বেড়ে যাওয়ায় এরমধ্যেই চরাঞ্চলের বহু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের বাজেট ও সংস্থান সীমিত, তবে আমরা দ্রুত জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি। বর্ষার আগেই যদি সম্ভাব্য এলাকায় ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যেত, তাহলে এই গ্রামগুলো এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। যেসব এলাকায় ভাঙনের সংখ্যা বেশি, সেখানে আমরা আগেই কার্যক্রম হাতে নেই। ভাঙনের কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা কমাতে আরও আলাদা বাজেট প্রয়োজন।’
তবে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আশপাশের আরও অনেক গ্রাম চিরতরে পদ্মার গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমার বার্তা/এল/এমই