গাইবান্ধায় ছড়িয়ে পড়ছে পশুবাহিত অ্যানথ্রাক্স

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:২৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে অ্যানথ্র্যাক্স। পশুবাহিত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি এ রোগের উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ফলে চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটছে মানুষের।

জানা গেছে, গবাদিপশুর অ্যানথ্র্যাক্স মোকাবিলায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে কিছু এলাকায়। সচেতনতা বাড়াতে চলছে প্রচার প্রচারণা। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ৮০ পয়সার ভ্যাকসিন এখনো ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ৯০ শতাংশ গবাদিপশু এখনো ভ্যাকসিনের বাহিরে আছে । এ পর্যন্ত ১৩টি গরু অ্যানথ্র্যাক্সে মারা গেছে। তবে গবাদিপশুর মালিকদের দাবি, মৃত গরুর সংখ্যা শতাধিক।

সরকারের হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ জন হলেও ৫০ ছাড়িয়েছে দাবি সচেতন মহলের। এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অ্যানথ্র্যাক্সের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের কাছে। আবার কোনো কোনো চিকিৎসক এ উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় চরম আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন এলাকাবাসী।

জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের (ফলগাছা) ইউপি সদস্য মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, এ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে কেবলমাত্র সচেতনতা। কিন্তু সে ধরনের কোনো কার্যকর ভুমিকা এখনো দেখছি না। সচেতনতায় এ পর্যন্ত কোনো মিটিং, আলোচনা বা মাইকিংও শুনিনি। পশু হাসপাতালের কোনো লোককেও আমার ওয়ার্ডে দেখিনি। বা কেউ বললোও না যে, আমি পশু হাসপাতাল থেকে আসতেছি। আপনি সহযোগিতা করেন।

বেলকা ইউনিয়নের জহুরুলের মোরস্থ পল্লি চিকিৎসক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪ জন অসুস্থ ব্যাক্তিকে পরামর্শ দিয়েছি। তাদের কেউ সহজে স্বীকার করেননি। তথ্য পেতে রাগারাগিও করেছি অনেকের সাথে। লজ্জা এবং ভয় দুটোই দেখেছি তাদের চোখেমুখে।

গাইবান্ধায় ‘তথ্য গোপনে’ ছড়াচ্ছে অ্যানথ্রাক্স

অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া নারীর ছেলে চিকিৎসকদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, অসুস্থ মাকে গত শনিবার (৪ অক্টোবর) সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। আমার মাকে কোনো ডাক্তার বা নার্স স্পর্শ করেনি। ডাক্তার এসে দূর থেকে ছবি তুলেছেন। ছেলেপেলেদের দিয়ে প্রেসার মাপিয়েছেন। কিন্তু মাকে নাড়ানাড়ি আমরাই করেছি। পরে ফোঁড়া স্যালাইন ও অক্সিজেন দিয়ে রংপুর নিতে বলেন। একজন রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের যে আচরণ হওয়া দরকার সেটি আমরা পাইনি। সম্ভববত তারা এ রোগকে ভয় অথবা ঘৃণা করেছেন।

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, আমার ইউনিয়নে অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ নিয়ে এক মহিলা মারা যাওয়ার পর থেকে গবাদিপশুর ভ্যাকসিন দিচ্ছে জোরেসোরে। তবে জনবল কম হওয়ায় আগাতে পারছেন না। জনবল আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, কারো শরীরে অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ দেখা দিলেও তারা শরম বা ভয়ে গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ ধরনের উপসর্গ যে ভয়ের কিছু না সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আরও প্রচারণা চালানো দরকার বলে মন্তব্য করেন এ ইউপি চেয়ারম্যান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক মৃত নারীর ছেলের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই সময়ে মেডিকেল আবাসিক অফিসার ও ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার দুজন তার মাকে দেখেছেন। যদি নাই দেখতো তাহলে চিকিৎসা দিলো কীভাবে? তার মা মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তারাই পাত্তা দেয়নি আমাদের।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, এ পর্যন্ত ২৪ হাজার গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। মজুত আছে ভ্যাকসিন। আরও এক লক্ষ চেয়ে আবেদন করেছি। খুব দ্রুত সময়ে সেগুলো পাবো।

আমার বার্তা/এল/এমই