উপদেষ্টা পরিদর্শনের পর পাল্টে গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চিত্র

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:


ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যানজট ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। কখনো কখনো ২৪ ঘণ্টাও থাকতো যানজট। সড়ক পরিদর্শনে এনে স্বয়ং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তিন ঘণ্টা যানজটের কবলে পড়েন।

তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে উপদেষ্টা পরিদর্শনের পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে খাঁটিহাতা বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত অংশ যানজটমুক্ত হয়েছে। গতি ফিরেছে যানবাহনে।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারত ও বাংলাদেশের আন্তঃবাণিজ্য গতিশীল করার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়কে চারলেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০১৫ সালে একনেকে এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। পরে ২০১৭ সালে কাজটি শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

তিনটি প্যাকেজে ভাগ করে এই চারলেন মহাসড়কের কাজ শুরু করা হয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও নানান জটিলতায় কাজের গতি তেমন পায়নি, চলছে মন্থর গতিতে। এতে করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে খানাখন্দের কারণে প্রতিদিনই দেখা দিচ্ছিল আশুগঞ্জ থেকে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে চারলেন প্রকল্পের প্যাকেজ-১ এর অংশ আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে খাঁটিহাতা মোড় এলাকায় মহাসড়কে দেখা দিতো বিপর্যয়। প্রতিদিন এই সড়কে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার যানজট লেগে থাকতো।

এ অবস্থায় গত ৮ অক্টোবর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশ পরিদর্শনে আসেন সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি সকালে ট্রেনে এসে ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে আশুগঞ্জের বাহাদুরপুরে তার গাড়ির বহর তীব্র যানজটে আটকা পড়ে। পরে তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে মোটরসাইকেলে মহাসড়ক পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছিলেন, সড়ক বিভাগের ১২ কর্মকর্তাকে নিয়মিত অফিস করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। সড়কের পরিকল্পনা কিছুটা সংশোধন হওয়ায় ১৬৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে দ্রুত কাজের গতি ফিরবে।

উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের গতি ফিরেছে। সড়কে নেই খানাখন্দ। সড়ক মেরামত কাজ তদারকিতে ব্যস্ত প্রকৌশলীরা। সড়কে নেই যানজট। তবে খাঁটিহাতা বিশ্বরোড মোড়ে সড়কের দক্ষিণ পাশে ঢাকাগামী সড়কের পাশে কাউন্টারের সামনে বাস দাঁড় করিয়া রাখা এবং উত্তর পাশে সিলেটগামী বাসে যাত্রী ওঠানোর কারণে মাঝে মধ্যে যানজট হচ্ছে।

ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে চলাচলকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক্সপ্রেস বাসের চালক মাসুম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘মাঝে যানজটে যে পরিস্থিতি হয়েছিল তাতে আমাদের জন্য এই সড়কে বাস চালানো ছিল অস্বস্তিকর। যেখানে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইবার আসা-যাওয়া করা করতাম, সেখানে একবার যেতেই দিন শেষ হয়ে যেতো। এখন অনেকটা স্বস্তিবোধ করি।’

সিলেটগামী আলী আকবর নামের একজন কাভার্ডভ্যানচালক বলেন, ‘হবিগঞ্জের যমুনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় ঢাকা থেকে মালামাল নিয়ে যেতে হয়। সড়কের যে অবস্থা ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না। যানজটের পাশাপাশি রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যেত। এই সময়টা অতিবাহিত করা ছিল কষ্টকর। এখন আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই অংশে জ্যাম নেই।’

খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে এখন আর কোনো যানজট নেই। এর কারণ হচ্ছে কাজ দ্রুত চলছে। মূলত বৃষ্টি হলে যেসব অংশ থেকে মাটি সরে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হতো, তা মেরামত করা হয়েছে। হাইওয়েতে পুলিশ তাদের নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।

আশুগঞ্জ টু আখাউড়া স্থলবন্দর চারলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, মহাসড়কে মেরামতের পাশাপাশি স্থায়ী কাজও চলছে। মাঝে ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় কাজের ধীরগতি ছিল। পরবর্তীতে বরাদ্দ পাওয়ায় এখন তা আবার পুরোদমে চলছে। প্যাকেজ-১ এ আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬২ শতাংশ। আশা করছি ডিসেম্বরে আরও অগ্রগতি হবে।

আমার বার্তা/এল/এমই