ঘাট সংকটে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুট প্রায় অচল
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পারের অপেক্ষায় প্রতিদিন আটকে থাকছে শত শত যানবাহন। ভোগান্তিতে যাত্রী ও শ্রমিকরা। এদিকে ঘাট ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘ লাইনে পারের অপেক্ষায় যানবাহন। ঘাট সংকটে সচল ঘাট অচল হয়ে পড়েছে। পাটুরিয়ার পাঁচটি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র একটি। জোড়া তালি দিয়ে চলছে তিন নাম্বার ঘাটটি। পুরোপুরি বন্ধ ৫, ২ ও এক নাম্বার ঘাট। এমন অবস্থায় ঘাট সংকটে যাত্রী ভোগান্তির পাশাপাশি এলাকাবাসী এখনও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। দীর্ঘ চার মাস ধরে পদ্মার ভাঙনের স্বীকার পাটুরিয়া ঘাট, কিছু জিও ব্যাগের কাজ হলেও, তা পদ্মার স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘাট ও এলাকা রক্ষার দাবি ঘাট সংশ্লিষ্ট ও এলাকাবাসীর।
কথা হয় রানা শিকদার নামের এক এলাকাবাসীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পদ্মার পানি কমলেও এখনো নদীর পাড়গুলো ভাঙছে। ইতোমধ্যে ঘাটগুলো একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা যারা ঘাটের পাড়ে রয়েছি , আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।
এলাকাবাসী মাসুদ বলেন, এখান থেকে কমপক্ষে ৫০ টি বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নদীতে চলে গেছে শতাধিক বাড়ি ঘর। আমরা যারা নদীর পাড়ে রয়েছি তারাও এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। এ বছর কাজ যদি না হয় তাহলে আগামী বছর এখানে থাকতে পারবো না।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা সাহেব বলেন, এখনো নদীর পাড় ভাঙছে। আতঙ্কে আর কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি। নিজের এইটুকু সম্পদ ছাড়া আর কিছুই নেই। এটুকু ভেঙে গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। একই অবস্থা নদীর পাড়ের মানুষগুলো সবাই।
পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে পাটুরিয়ার লঞ্চঘাট ও ৫ নাম্বার ফেরিঘাট। এমন অবস্থায়, ঝুঁকি নিয়ে অস্থায়ী ঘাটে লঞ্চ চলাচল করলেও, চরম বিপাকে রয়েছে যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকরা।
এমন অবস্থা দেখে আমরা কথা বলি লঞ্চ চলাচলের সঙ্গে জড়িত পান্নু বাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতি বছরের ৫ আগস্ট থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরপর অস্থায়ী এই জায়গাটায় আমরা রয়েছি। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ, এখানে যাত্রী আসে না, যার জন্য আমরা খুব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। কর্তৃপক্ষের নতুন ঘাট তৈরির কোন উদ্যোগ আমরা দেখছি না। এমন অবস্থায়, আমরা লঞ্চের সঙ্গে জড়িতরা কষ্টের মধ্যে আছি।
আরিফ নামের এক বাস চালক বলেন, দীর্ঘ সময় ঘাটে লম্বা লাইনে আটকে থাকতে হচ্ছে। কারণটি ঘাট সংকট হয়ে পড়েছে। একটি ঘাট দিয়ে পাঁচটি ঘাটের কাজ কি হয়? কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে, থাকতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় তো এই নৌ-রুট দিয়ে চলাচল খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
কথা হয় রফিক নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘাট সংকটের কারণে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি। এতে ঘাট এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাধান দিবে-কে ভাই, আমাদের কথা শোনার মতো কেউ নাই।
ট্রাক ড্রাইভার সিদ্দিক বলেন, বাসকে অগ্রধিকার দেয়ায় আমাদের এখনও ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। এমন অবস্থায় খুব বিপাকের মধ্যে রয়েছি।
বিআইডব্লিউএ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুয়েল মিয়া জানান, ঘাটগুলো মেরামতে ১৩ কোটি টাকা লাগবে। পানি ও স্রোত থাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি কমে আসলে এই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করা হবে। আরও ৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে মোট এক হাজার ৪০০মিটার এলাকায় পদ্মার ভাঙন রক্ষায় কাজ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি আরও জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটের পাটুরিয়া ঘাট এলাকার ২ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙনে ৫টি ঘাটসহ অন্যত্র চলে গেছে কমপক্ষে শতাধিক বসতবাড়ি। এক হাজার ৪০০ মিটার এলাকা স্থায়ী ব্যবস্থার জন্য ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। আরও ৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে এই প্রকৌশলী।
আমার বার্তা/এল/এমই
