সাইকেল কিনতে এসে টাকা চুরি, দেখে ফেলায় দুই খালাকে খুন

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ১৮:১৬ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

সাইকেল কিনতে খালার বাসায় এসেছিল ভাগনে গোলাম রব্বানী (১৪)। খালার অগোচরে মানিব্যাগ থেকে ৩০০০ টাকা বের করার সময় ধরা পড়ে যায়। মাকে বলে দিতে চাওয়ায় টেবিলে থাকা ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালাকে, পরে তার চিৎকারে ছুটে আসা ছোট খালাকে ছুরিকাঘাত করে এবং শিলপাটা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।

রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় জোড়া খুন করে এভাবেই পোশাক বদলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় গোলাম রব্বানী। পরে খালাদের জানাজায়ও অংশ নেয় সে। পুলিশের তদন্ত কাজেও সে সহযোগিতা করে এবং নানাভাবে আড়িপাতার চেষ্টা করে।

পরে ডিবি পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও পারিপার্শ্বিক তদন্তের ভিত্তিতে তাকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে দুই খালাকে খুন করেছে বলে স্বীকার করে সে।

সোমবার (১২ মে) বিকেল সোয়া ৪টায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, মামলার বাদী নুসরাত জাহান ভিকটিম মরিয়ম বেগমের মেয়ে ও অপর ভিকটিম সুফিয়া বেগমের ভাগনি। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত শুক্রবার (৯ মে) রাত ১২টায় গ্রেপ্তার ওই শিশু যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ার বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ার জন্য পাঞ্জাবি পরে বের হয়। কিন্তু সে বাসা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট পড়তে না গিয়ে তার বড় খালার (মরিয়ম বেগম) শেওড়াপাড়ার বাসায় যায়।

সিএনজির ভেতরেই সে পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে নীল রঙের টিশার্ট পরিধান করে। তারপর শেওড়াপাড়া মেট্রোরেলের নিচে নেমে একটি লাল রঙের ক্যাপ মাথায় ও মুখে মাস্ক পরে আনুমানিক ১২টা ৫০ মিনিটে বড় খালার বাসায় পৌঁছায়। গেটে তালা না থাকায় সে গেট খুলে দ্বিতীয় তলায় তার বড় খালার রুমে নক করলে তিনি চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেন।

বাসায় প্রবেশের পর বড় খালা তাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি একা আসছ নাকি তোমার মা সাথে আসছে? তখন সে বলে মা আসতেছে, আমি আগে চলে আসছি। তখন তার বড় খালা তাকে আপ্যায়ন করার জন্য শরবত বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) প্লেট বাটি ধোয়ামোছা করে বারান্দার দিকে যান।

এই সুযোগে সে বড় খালার রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে পুরাতন সাইকেল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা চুরি করে। বিষয়টি তার বড় খালা দেখে ফেললে তাকে গালাগালি ও বকাবকি করেন। বলেন, তোর স্বভাব ভালো হবে না, তুই চুরি করার জন্য আমার বাসায় আসছিস, তোর মাকে এখনই জানাচ্ছি। তখন তার খালা তার মাকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল খুঁজতে থাকেন। সেই মুহূর্তে সে (গোলাম রব্বানী) ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটার ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে। তখন বড় খালা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মারতে উদ্যত হলে সে পুনরায় আঘাত করে। তার বড় খালার বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করলে শব্দ শুনে সেজো খালা (সুফিয়া) পেছনের অন্য একটি রুম থেকে এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর সে ওই একই চাকু দিয়ে সেজো খালার পেটে একবার আঘাত করলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। বড় খালা তখনো চিৎকার করছিলেন।

তারপর সে রান্নাঘরের চুলার পাশ থেকে শিলপাটা এনে বড় খালার মাথায় একাধিকবার আঘাত করে। পরে সেজো খালাকেও আঘাত করে। তারপর সে বাথরুমে গিয়ে হাত ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। পাশের রুমে গিয়ে সে টিশার্ট ও জিন্স প্যান্টে রক্ত লেগে থাকায় পরিবর্তন করে খালাতো বোন মিষ্টির ব্যবহৃত একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরে। সে দরজা বাইরে থেকে তালা মেরে চাবি নিয়ে বের হয়ে শনির আখড়ায় যাওয়ার জন্য রাস্তায় এসে সিএনজিতে ওঠে।

কিছুদূর যাওয়ার পর বাসার চাবিগুলো ও তার পরিহিত ক্যাপ মেইন রোডে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। শনির আখড়া পৌঁছার পর চুরি করা ৩ হাজার টাকা থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে সিএনজি ভাড়া দেয় এবং বাকি টাকায় রক্ত লেগে থাকার কারণে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।

তারপর শনির আখড়ায় সিএনজি থেকে নেমে আয়শা মশার মার্কেটের (ইস্টার্ন শপিং সেন্টার) তৃতীয় তলার মসজিদের ওয়াশরুমে ঢুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ব্যাগে থাকা সকালে পরিহিত গোলাপী রঙের পাঞ্জাবি পুনরায় পরিধান করে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে রক্তমাখা কাপড়গুলো ভেন্টিলেটর দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর বাসার সামনে এসে একটা বাড়ি যেখানে কেউ থাকে না, সেখানে তার জুতা জোড়া ছুড়ে মারে। তারপর বাসায় চলে যায়।

যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম জানান, পরদিন ১০ মে বিকেলে তার সেজো খালাকে দাফন করার জন্য তার নানুর বাড়ি ঝালকাঠির উদ্দেশে রওয়ানা করে সে। পরে ১১ মে (রোববার) বিকেল সাড়ে ৩টায় ডিবি মিরপুর বিভাগের একটি টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও  তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুই খালা হত্যায় জড়িত শিশু ভাগনেকে ঝালকাঠি সদরের নানুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।

পরে তার দেখানো মতে ইস্টার্ন শপিং সেন্টারের পাশের সুয়ারেজ লাইনের ওপর থেকে নীল রঙের রক্ত মাখা টিশার্ট ও ব্লু কালারের রক্ত মাখা দুটি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাতো বোন মিষ্টির জিন্স প্যান্ট ছিল। তার বাসার সামনে নির্জন বিল্ডিংয়ের ওপর তার ফেলে দেওয়া জুতা জোড়াও উদ্ধার করা হয়।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ওই শিশু আজ সোমবার চুরির ঘটনায় তার আপন দুই খালাকে হত্যা করার বিষয়ে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে নাসিরুল ইসলাম বলেন, এখানে অন্য কারো সংশ্লেষ ছিল কি না, পারিবারিক সম্পত্তিজনিত কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


আমার বার্তা/এমই