এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৭০ ভরি সোনা লুট, তদন্তে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ১৬:১৯ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আট মাস আগে যৌথ বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর ৭০ ভরি সোনা লুটের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটে যাওয়া সোনা লুটের ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশের চার সদস্য। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যরা হলেন কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন সরকার, কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও আবু বকর। এ ছাড়া লুটের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালামকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এখন কারাগারে আছেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের রমনা জোনের এসআই মো. ইরফান খান বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও দীর্ঘ তদন্তের ৭০ ভরি সোনা লুটের ঘটনার রহস্য বের করা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই রিপনসহ পুলিশের চার সদস্য জড়িত।

মামলার নথি, বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, এক আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে পুরান ঢাকার বংশালে যাওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের। এ কারণে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সাইফুল তার খালা সাজিয়া সুলতানা ও খালাতো বোন জিনাত সুলতানাকে নিয়ে উড়োজাহাজে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর পুরান ঢাকায় যাওয়ার জন্য উবারে একটি প্রাইভেট কার ঠিক করেন তিনি। প্রাইভেট কারটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে মগবাজারের দিকে রওনা হয়। কিন্তু টোল প্লাজা পার হওয়ার পরপরই সাইফুলকে বহনকারী প্রাইভেট কারের সামনে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে থামে। গাড়ি থেকে চারজন লোক নেমে প্রাইভেট কারের ভেতরে বসে থাকা সাইফুল ইসলামসহ অন্যদের কাছে নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেন। মুহূর্তের মধ্যে তারা সাইফুলের হাতে হাতকড়া পরিয়ে সবাইকে ওই কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। মাইক্রোবাসের জানালার গ্লাস কালো রঙের ছিল, যেন বাইরে থেকে গাড়ির ভেতরে কিছু দেখা না যায়।

ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, গাড়ির ভেতরে তোলার পর তাদের মারধর করে সবকিছু লুটে নেওয়া হয়। তাদের কাছে মাদক থাকার কথা বলে মামলা ও গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয়। এরপর তাদের ৩০০ ফিট এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৭০ ভরি সোনা লুটের এই ঘটনা ঘটলেও মামলা করা হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। এর কারণ জানতে চাইলে মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম বলেন, ভয়ে প্রথমে মামলা করিনি। পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিই।

মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে ও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মামলা করার পরদিন গ্রেপ্তার হন ওই মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালাম। তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ৯ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমানকে। পরে তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশ সদস্য মিজানুরের জবানবন্দিতে উঠে আসে সোনা লুটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী এসআই রিপন সরকারের নাম।

তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইরফান খান জানান, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কনস্টেবল মিজানুর ও আবদুস সালামকে শনাক্ত করা হয়। পরে সোনা লুটে কারা জড়িত, তাদের নাম প্রকাশ করেন মিজানুর। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরে রিপন ও আবু বকরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত আরেক কনস্টেবল হানিফকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।


আমার বার্তা/এমই