সিস্টেম লসের নামে চুরি বন্ধ হলে গ্যাসের দাম বাড়ানো লাগে না

ইআরএফের সেমিনারে অভিমত

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লসের নামে ১০ শতাংশ চুরি বন্ধ করা গেলে নতুন করে গ্যাসের দর বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই পারে এ চুরি বন্ধ করতে। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।

অর্থনৈতিক বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরাম (ইআরএফ) রাজধানীর পল্টনে নিজস্ব কার্যালয়ে এই সেমিনারটির আয়োজন করে।

বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, প্রশাসক হাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, লাফার্স হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল।

নতুন করে গ্যাসের দর বৃদ্ধি ও ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সমালোচনা করে একে আজাদ বলেন, সরকার যে নীতি নিচ্ছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে আমরা কোথায় যাবো? গ্যাস এবং ভ্যাট বৃদ্ধির আগে অর্থনীতি এবং জনজীবনে এর কি প্রভাব পড়বে তা খতিয়ে দেখা হয়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি।

গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লসের নামে ১০ শতাংশ চুরি বন্ধ করা গেলে নতুন করে গ্যাসের দর বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই পারে এ চুরি বন্ধ করতে। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, পণ্য আমদানি, রপ্তানি এবং মূলধনি যন্ত্রের আমদানি কমেছে। এই চিত্র বলছে বিনিয়োগ কমেছে। অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে গ্যাস এবং ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা চিন্তা করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আসলে সব সরকারের চরিত্রই এক। গত সরকার বলেছিল গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি।

ভ্যাট পরিস্থিতির বিষয়ে প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে বিডার চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাটের বিষয়টি নিয়ে তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করবে।

গ্যাস পরিস্থিতির বিষয়ে বলেন, শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ থাকা উচিত।

মালয়েশিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দেশটিতে উৎপাদিত গ্যাসের ৭০ শতাংশই শিল্পে ব্যবহার হয়। এবং গ্যাসের বরাদ্দ শিল্প মন্ত্রণালয়ই করে থাকে।

শিল্পে গ্যাস সরবরাহ সংকট নিয়ে উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আপাতত রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ শিল্প কারখানাগুলো বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে ছেড়ে দেওয়া যায় কি না তা চিন্তা করছি। কারণ এখানে এরই মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ সুবিধা রয়েছে। ফলে কারখানাগুলো দ্রুত উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব।

গ্যাস ও ভ্যাট প্রসঙ্গে আবুল কাশেম খান বলেন, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এসআরও জারি করে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য ঘনঘন নীতির পরিবর্তন করা হয়।

তিনি বলেন, নীতি গ্রহণে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা হয় না। দুর্নীতির কারণে সব খাত নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ভেঙে দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থার করতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। যাতে টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি হয়।

লাফার্স হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, নতুন বিনিয়োগ আনতে দেশের বাইরে গিয়ে রোড শো করা হয়েছে। অথচ দেশেরে বিদ্যমান বিনিয়োগের পরিস্থিতি বুঝার প্রয়োজন ছিল। তাদের চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করার দরকার ছিল। বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই। অথচ এই বিনিয়োগকিারীরাই বৈদেশিক বিনিয়োগে দেশের পক্ষে কাজ করবে।

তিনি বলেন, নীতি ঠিক নেই, আইনশৃঙ্খলা ঠিক নেই, নতুন একটা উদ্যোগ নিতে গেলে ২৩ থেকে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সের মতো কাজগুলো করা সময় সাপেক্ষ। এসব অসুবিধা দূর করতে হবে।

এফবিসিআই এর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করলে দস্যুরা নিয়ে যায়। দোকান দিলে চাঁদাবাজরা নিয়ে যাবে। এই অনিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের পথ সুগম করতে ট্যাক্স হ্যাভেন না হলেও একটু সুবিধা  দিতে হবে। যাতে ব্যবসা করতে গিয়ে কিছু পুঁজি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়।

সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বিডার হেড অব বিজনেস ডেভলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি।

তিনি বলেন, এফডিআই আকর্ষণে হিটম্যাপ নামে একটা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে ২০টি প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে ১৯টি অগ্রাধিকার খাত নির্বাচন করা হয়েছে। হিটম্যাপ অনুযায়ী এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়তে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে বিডার পক্ষ থেকে আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল বিনিয়োগ সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ও আলোচনার সুযোগ তৈরি করা হবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ইকোনমিক জোনগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তারা।


আমার বার্তা/এমই