যে কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দুই ভাগ করলো সরকার
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫, ১৬:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি পৃথক সংস্থা গঠনের বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ (মঙ্গলবার) কেন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো, সে ব্যাপারে ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছেন।
শফিকুল আলম বলেন, এ সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো কর নীতিনির্ধারণ ও কর প্রশাসনকে আলাদা করা যাতে দক্ষতা বাড়ানো যায়, স্বার্থের সংঘাত কমানো যায় এবং দেশের করভিত্তি বিস্তৃত করা যায়।
তিনি জানান, প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর কখনোই তাদের রাজস্ব লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ যা এশিয়ায় সর্বনিম্নের মধ্যে পড়ে। তুলনার জন্য বলা যায়, বৈশ্বিক গড় ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ার অনুপাত ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে এই অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে উন্নীত করা জরুরি।
এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রতিষ্ঠানকে একই সঙ্গে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিলে স্বার্থের সংঘাত ও অদক্ষতা তৈরি হয়। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত মত।
দীর্ঘদিনের সমস্যা
স্বার্থের সংঘাত: নীতিনির্ধারণ ও কর আদায় একই ছাতার নিচে থাকায় নীতিগুলো অনেক সময় দুর্বল হয়েছে এবং অনিয়ম ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে যারা কর আদায় করছেন, তাদের জন্য কোনো কার্যকর জবাবদিহি নেই। কর ফাঁকি দেওয়া করদাতাদের সঙ্গে তারা অনেক সময় ব্যক্তিগত স্বার্থে সমঝোতায় যান। কর কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা পরিমাপের কোনো নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নেই এবং তাদের পদোন্নতি বা মূল্যায়নও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে হয় না।
অদক্ষ রাজস্ব আদায়: একই সংস্থার নীতি ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকায় দুই ক্ষেত্রেই মনোযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে করের আওতা সংকীর্ণ রয়ে গেছে এবং সম্ভাবনা মতো রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি।
দুর্বল শাসনব্যবস্থা: এনবিআরের এনফোর্সমেন্ট ছিল খামখেয়ালি, বিনিয়োগ সহায়তায় ছিল ঘাটতি এবং পুরো ব্যবস্থায় ছিল শাসনসংক্রান্ত ত্রুটি। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে এবং আইনের শাসন দুর্বল হয়েছে।
বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধান, একই সঙ্গে এনবিআরের প্রধান হওয়ায় দায়িত্ব বিভাজন পরিষ্কার ছিল না। এতে করনীতি তৈরিতে ও বাস্তবায়নে কার্যকারিতা ব্যাহত হয়েছে।
মনোবলহীনতা ও অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা
এ সংস্কারের কারণে অভিজ্ঞ কর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে তারা হয়তো উপেক্ষিত হবেন।
>> সংস্কারে কী ধরনের উন্নয়ন হবে
দায়িত্বের স্পষ্ট বিভাজন : রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, হারে নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে কাজ করবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর আদায়, অডিট ও অনুগততা নিশ্চিত করবে। এতে যারা করের নীতি ঠিক করবেন, তারা আর তা আদায় করবেন না। ফলে স্বার্থের সংঘাত ও দুর্নীতির সুযোগ কমবে।
দক্ষতা ও শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন : প্রতিটি বিভাগ নিজের দায়িত্বে মনোযোগ দিতে পারবে ফলে প্রতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে।
করভিত্তি প্রসারণ ও প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ জোরদার : এ সংস্কার প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে দক্ষ পেশাজীবীদের নিযুক্ত করার মাধ্যমে করের আওতা বাড়াবে এবং পরোক্ষ কর নির্ভরতা কমাবে।
উন্নয়নমুখী নীতি : একটি বিশেষায়িত নীতিনির্ধারণ বিভাগ প্রমাণভিত্তিক, দীর্ঘমেয়াদি ও উন্নয়নবান্ধব কর নীতি প্রণয়ন করতে পারবে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি : স্বচ্ছ, পূর্বানুমেয় করনীতি ও পেশাদার প্রশাসন ব্যবসার পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
সবশেষে শফিকুল আলম বলেন, এ সংস্কার কেবল একটি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নয়, এটি বাংলাদেশের কর ব্যবস্থাকে আরও ন্যায্য, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করার একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। উন্নত নীতিনির্ধারণ ও পরিচ্ছন্ন কর প্রশাসন দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে।
আমার বার্তা/এমই