কিছুটা ভুল উপায়ে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে: সিপিডি
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১৭:২৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা ভুল উপায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করছে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংলাপে এ তথ্য জানানো হয়। ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শক্তি এবং শক্তির খাত: শক্তি পরিবর্তনের জন্য অগ্রাধিকারের প্রতিফলন’ শীর্ষক সংলাপ আয়োজন করে সিপিডি।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি বলেন, আমাদের বিভিন্ন জ্বালানির- তেল বা গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। সেটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে কিছুটা ভুল উপায়ে মূল্যগুলো সমন্বয় করা হচ্ছে। যাতে করে আমাদের আর্থিক বোঝার ওপর একটা প্রভাব পড়ছে। আমাদের সেই আর্থিক বোঝা সেগুলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দেনাগুলো আছে সেইগুলার পেমেন্ট গুলা ডিউ রয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৮টি সংকট রয়েছে। সেগুলো হলো- নিয়ন্ত্রক সংস্থার আর্থিক সংকট, গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ সরবরাহে ব্যর্থতা, ভুল উপায়ে জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করা, জ্বালানি রূপান্তরের গতি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তিনটি শূন্য (শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ)। সেদিক বিবেচনায় আমরা ২.৫০ শূন্যে দাঁড়িয়েছি। কারণ আমাদের বাজেট জ্বালানি খাতে কয়লার নির্ভরতা কথা বলছে, এলএমজি আমদানির কথা বলছে। খুব বেশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কোনো ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। এসব যখন আমরা দেখছি, তখন বলতে হচ্ছে শুন্য নেট কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। যেখানে এক পা এগিয়ে যাওয়া কথা ছিল, সেখানে এক পা পিছিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম যদি বাজেটে প্রো-ফসিল ফুয়েল না হয়ে প্রো- রিনিউয়েবল ফুয়েল হতো।
হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি বলেন, বিগত সময়ের মতো এবারের বাজেটও প্রো-ফসিল ফুয়েল রয়ে গেছে। বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিবেচনায় বিগত বাজেট হতাশ করেছে।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় প্রিয়তি আরও বলেন, বাজেটে আমরা এলএমজি আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেখতে পেলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বরাদ্দ কমেছে। এক্ষেত্রে আমরা বিপরীত চিত্র দেখতে পেলাম। এবার মাত্র ৭টি প্রকল্পে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দেওয়া হয়েছে, গত বছর ৪টি প্রকল্পে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছিল। সেদিক থেকে আমরা ইতিবাচক বলা যায়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যদিও বাজেট বক্তব্যে বিশেষ তহবিলের কথা এসেছে। যেখানে ৭০০ কোটি টাকার তথ্য এসেছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করি।
সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা সবাই অবগত যে এই বাজেটটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। বাজেটে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। বিগত সরকারের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ হয়েছে তার বিপরীতে হয়তো জ্বালানি প্রাপ্যতা বেড়েছিল। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা দেখেছি গুণমান সম্পন্ন বিদ্যুৎ- জ্বালানি পাওয়া বা জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া সেই কাজগুলো হয়নি। বরং এই সময়গুলোতে ব্যাপক লুটপাট হতে দেখেছি। অর্থের অপচয় হতে দেখেছি, সুশাসনের অভাবের মতো বড় সমস্যা বিগত সরকারের আমলে দেখেছি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন গত দুর্বলতা অন্তর্বর্তী সরকার চিহ্নিত করবে। জ্বালানি রূপান্তরের জায়গায় কার্যকর ভূমিকা নেবে, নীতি কাঠামোতে তারা আরও বেশি ভারসাম্য ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই জ্বালানির বিষয়টি তারা গুরুত্ব দেবেন।
সংলাপে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এতে বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/এমই