আলু-পাট রফতানিতে খুলেছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বছরের শুরু থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি কমেছে। একসময় ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ ট্রাক বোল্ডার পাথর দেশে প্রবেশ করলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১৫০-২০০ ট্রাকে। কখনো আবার সংখ্যা আরও কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আমদানি কমলেও রফতানির খাত খুলেছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।
১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপালের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। পরে ভারত ও ভুটানের সঙ্গেও আমদানি-রফতানি শুরু হয়। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় ২৮ বছরেও প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি এ বন্দর।
স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, আমদানি করা পাথরের ট্রাকের পাশাপাশি আলু ও পাটবোঝাই ট্রাক অপেক্ষা করছে রফতানির জন্য। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে হতাশা থাকলেও বন্দরে কর্মচাঞ্চল্যের কিছুটা ছাপ মিলেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানান, রফতানি কার্যক্রম বাড়লেও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, শুল্ক জটিলতা ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। শ্রমিক নেতাদের মতে, বন্দরের কার্যক্রম সচল থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত আমদানি কমেছে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস। তাদের দাবি, ভারতের ভেতরে একের পর এক নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আর বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে ভারত-ভুটান দ্বন্দ্বের কারণে ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সীমিত আকারে শুরু হলেও ভারতের সঙ্গে দাম নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে বছরের শুরু থেকে ভারতের পাথর আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ভারত ও ভুটানের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন কারণে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আমদানি প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন কমেছে। তবে রফতানি বেড়েছে ১৫-২০ হাজার মেট্রিক টন। সমস্যাগুলো কেটে গেলে এ বন্দর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’
তবে আমদানির পাশাপাশি রফতানির খাত খুলেছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। প্রতিদিনই আলু, পাট ও গার্মেন্টস ঝুটসহ বিভিন্ন বাংলাদেশি পণ্য রফতানি হচ্ছে নেপালসহ একাধিক দেশে। বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারেন্টিন ইন্সপেক্টর উজ্জ্বল হোসেন জানান, ‘বর্তমানে নেপালে আলু ও পাটের চাহিদা দ্বিগুণ হওয়ায় রফতানি খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এ বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে আলু, পাট সহ বিভিন্ন পণ্য।’
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (৩১ আগস্ট) একদিনেই নেপালে রফতানি হয়েছে ৫৯০ মেট্রিক টন পাট ও ৮৪ মেট্রিক টন আলু। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন পাট এবং ২৪ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন আলু রফতানি হয়েছে।
স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি কমলেও কৃষিপণ্য রফতানিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে বাংলাবান্ধা। সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিগত সহায়তা পাওয়া গেলে এ স্থলবন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারবে।
আমার বার্তা/এল/এমই