বাংলাদেশ-মার্কিন বস্ত্রখাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বিজিএমইএ ও মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:০১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘কটন ইউএসএ’-এর উদ্যোগে মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আজ (৪ নভেম্বর ২০২৫) উত্তরা বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়।
বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল—দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, মার্কিন তুলার ব্যবহার সম্প্রসারণ, এবং বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নবঘোষিত শুল্ক সুবিধা কাজে লাগানো।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা।
আলোচনায় বাংলাদেশের পোশাক খাতে মার্কিন তুলা সরবরাহের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। মূল ফোকাস ছিল সম্প্রতি ঘোষিত মার্কিন নির্বাহী আদেশ, যেখানে পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “এই নতুন শুল্ক ছাড়ের সুযোগ আমাদের শিল্পখাতের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা এনে দিয়েছে, যা আমাদের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।” তবে তিনি উল্লেখ করেন, এই সুবিধা কোন প্রক্রিয়ায় পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে এখনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
তিনি মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান, যেন তারা মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় স্পষ্টীকরণ এনে বিজিএমইএ’কে সরবরাহ করেন, যাতে উদ্যোক্তারা বিলম্ব না করে প্রস্তুতি নিতে পারেন।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, বর্তমানে আমদানিকৃত তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন কৌশলগত পদক্ষেপ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তিনি প্রস্তাব করেন, মার্কিন তুলার গুণগত মান ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে গবেষণা করে তথ্য সরবরাহ করলে বাংলাদেশি স্পিনাররা আমদানি বাড়াতে আগ্রহী হবেন।
মার্কিন প্রতিনিধিদল বিজিএমইএ সভাপতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
বৈঠকে তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে তুলা রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক নথি প্রস্তুতের কিছু জটিলতা রয়েছে। তারা এই সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএ’র সহযোগিতা কামনা করেন।
এর জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতাগুলো লিখিতভাবে জানালে তিনি বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করবেন, যাতে দ্রুত সমাধান করা যায়।
প্রতিনিধিদল জানায়, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, অন্যদিকে মার্কিন তুলা তার টেকসই গুণগত মান ও নির্ভরযোগ্যতার জন্য সুপরিচিত। তাদের মতে, মার্কিন তুলা ব্যবহারে বাংলাদেশের পোশাক আরও উন্নত মানের হবে এবং শুল্ক ছাড় কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি দ্রুত করার লক্ষ্যে একটি ওয়্যারহাউজ স্থাপনের সম্ভাবনাও আলোচিত হয়, যা বাস্তবায়িত হলে উৎপাদন সময় (লিড টাইম) কমবে।
উভয় পক্ষ নতুন শুল্কনীতি ও কাঁচামাল ব্যবহারের স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়।
বিজিএমইএ মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানায়, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে। পাশাপাশি, বিজিএমইএ ইনোভেশন সেন্টারে উৎপাদন বৃদ্ধি ও অপচয় হ্রাসে গবেষণার জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানায়।
বৈঠকের শেষে উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
আমার বার্তা/এমই
