
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে রিপাবলিক অব জিবুতি সুবিধাজনক মাধ্যম। দেশটি এশিয়ার সিঙ্গাপুরের মতো ব্যবসায়িক হাব হতে পারে। এখানে পণ্য উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে কোন শুল্ক বা কর দিতে হয় না। রয়েছে দ্রুততম বন্দর সুবিধা। সব মিলিয়ে জিবুতিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহবানা জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত আবদিল্লাহি আসোয়েহ ইসে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত আগামী জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের জিবুতি সফর বিষয়েও বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জিবুতির অনারারি কনসাল ও বারভিডার সভাপতি আবদুল হকসহ আরও অনেকে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত, টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক্স, ওষধ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও বাজার বৈচিত্র্য করণের জন্য আফ্রিকা হতে পারে বড় রপ্তানির বাজার। আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য জিবুতি হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। এখানে পণ্য উৎপাদন বা রপ্তানি করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পণ্য ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। দেশটি এই সুবিধা দিতে আমদানি রপ্তানি টেক্সফ্রি করে দিয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার ইস্যুতেও তারা বেশ এগিয়ে গেছে। দেশটি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এশিয়ার সিঙ্গাপুরের মতো হতে চাইছে। ইতিমধ্যে চীন ও ভারত এই সুযোগগুলো নিয়ে তারা সেখানে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। সেখানে পণ্য জমা করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পণ্য বিক্রি করছে তারা।
বাংলাদেশ বর্তমানে জিবুতিতে তৈরি পোশাক, ওষুধ, পাট ও পাটজাত পণ্য, চা, হোম টেক্সটাইল এবং পানীয় রপ্তানি করছে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারে।
আবদিল্লাহি আসোয়েহ ইসে বলেন, জিবুতি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত আকর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বারে অবস্থান হওয়ায় এবং দেশটিতে অবকাঠামোগত ও নিরাপত্তার সুবিধা থাকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য জিবুতি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারবে সেখানে। বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে জিবুতি সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী নয়। জিবুতি কোন পণ্য তৈরি করে না।
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা জিবুতিতে আসেন, বিনিয়োগ করেন, এখান থেকে যে কোন দেশে রপ্তানি করেন। আপনাদের কোন ট্যাক্স লাগবেনা। ব্যাংকিংসহ সব ধরণের সুবিধা আমাদের আধুনিক। এখানে দ্রুত গতির পোর্ট সুবিধা রয়েছে। মরক্কোর পর আমাদের পোর্ট আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতির বন্দর।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে জিবুতির অনারারি কনসাল আবদুল হক বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে আমাদের বিনিয়োগকারীরা জিবুতির অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কর ছাড়ের সুবিধা ও উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ কাজে লাগাতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমরা জিবুতিকে আফ্রিকা অঞ্চলে রপ্তানির হাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। ইতিমধ্যে ভারত এই সুযোগ নিতে শুরু করেছে। ভারতের গুজরাটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন সপরিবারে সেখানে চলে যাচ্ছে। জিবুতিকে কেন্দ্র করে তাদের এক ভাই সাউথ আফ্রিকা, আরেক ভাই সোমালিয়া অবস্থান করে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছে।
ব্যবসায়িক সম্ভাবনা দেখতে আগামী জানুয়ারি মাসে একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যাব। বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। এ জন্য আমাদের কাছে আগে নিবন্ধন করে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হতে পারেন।
জানা যায়, আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। দেশটির মোট আয়তন ২৩ হাজার ২০০ বর্গ কিলোমিটার। বেশির ভাগ এলাকাই বিরান, জনসংখ্যা ১১ লাখের মতো। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশটি আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া এবং অবশিষ্ট এশিয়াকে সংযুক্ত করেছে। সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও ইয়েমেনের মধ্যখানে এর অবস্থান। এটাই হলো দক্ষিণ দিক দিয়ে লোহিত সাগরে প্রবেশের পথ। দেশটির লাগোয়া বাব আল মানদেব প্রণালি আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের জন্য কৌশলগতভাবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক নীতির সংঘাতময় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। বাব আল-মানদেব প্রণালি ঘেঁষে ছোট্ট আফ্রিকান দেশ জিবুতি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত জাহাজ চলাচল রুট সুয়েজ খালের প্রবেশদ্বার। দেশটির বন্দরই এর অর্থনীতির প্রাণশক্তি। দেশটি বলতে গেলে বিরানভূমি।
জিবুতির জিডিপি আকার প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের ৪৭৫ বিলিয়ন ডলার। তবে মাথাপিছু আয়ে জিবুতি অনেক শক্তিশালী। জিবুতির মাথা পিছু আয় ৪ হাজার ১১০ ডলার। যেখানে বাংলাদেশের মাত্র ২ হাজার ৬২০ ডলার। জিবুতির মূল্যস্ফীতির হার মাত্র ১.৮ শতাংশ।
আমার বার্তা/এমই

