প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষার সব স্তরে নিরবচ্ছিন্ন কাঠামো জরুরি

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৫২ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক:

শিক্ষার সব স্তরের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাকাঠামো তৈরির দাবি জানিয়েছে দেশে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’।

সংস্থাটি বলছে, শিক্ষায় রূপান্তর এখন শুধু একটি শিক্ষাক্রম বা নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যক্রম নয়। শিখন-শেখানো পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উপকরণ প্রস্তুত, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রণয়ন ও শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যেতে হবে। এ রূপান্তর হতে হবে নিরবচ্ছিন্ন ও সব স্তরে সামগ্রিকভাবে।

‘বৈষম্যদূরীকরণে শিক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন রূপান্তর: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক পলিসি ব্রিফে (নীতি-সংক্ষেপ) এ মতামত তুলে ধরেছে সংস্থাটি। বুধবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ নিয়ে ব্রিফিং করা হয়।

গণসাক্ষরতা অভিযান তাদের পলিসি ব্রিফে (নীতি-সংক্ষেপ) পাঁচটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব করেছে। স্তরগুলো হলো- প্রাক-প্রাথমিক বা শৈশবকালীন শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা এবং শিক্ষা প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ।

>> প্রাক-প্রাথমিক বা শৈশবকালীন স্তর

বাংলাদেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও এর শিক্ষাক্রম প্রণয়নে বৈশ্বিক রূপরেখাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এ কার্যক্রমের গুণগত মান ও যথেষ্ট অন্তর্ভুক্তিমূলক করা সম্ভব হয়নি। এ স্তরে শিক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জনবল গুরুত্ব দিয়ে ঢেলে সাজানো দরকার।

>>প্রাথমিক শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের দক্ষ ভিত তৈরি করে দিতে না পারলে মাধ্যমিকে গিয়ে উচ্চ হারে ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সারাজীবন শিক্ষায় পারদর্শী না হওয়ার ফলে অর্জিত সাক্ষরতাও হারিয়ে ফেলে। পুরো প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় মুখস্থনির্ভর লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে এবং পিইসির মতো হাই-স্টেক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা পরিমাপের অপচেষ্টা করা হয়েছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের ২০১৪ সালের গবেষণায় দেখা যায়, মুখস্থ ও পরীক্ষানির্ভর শিক্ষা কোচিং এবং গাইড ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা দেওয়া হলেও পারিবারিক শিক্ষাব্যয় বেড়েছে ও শিক্ষায় পরিবারের আয়ের ভিত্তিতে এবং শহর-গ্রামের বৈষম্যও প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে।

>> মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর

গণসাক্ষরতার পলিসি ব্রিফে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা এবং জীবিকানির্ভর দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সন্নিবেশ করে দেওয়া। এজন্য মাধ্যমিক শিক্ষা বহুপথ সৃষ্টিকারী একটি ব্যবস্থা হওয়া দরকার, যেন এ শিক্ষা গ্রহণের পর যেকোনো শিক্ষার্থী তার ইচ্ছা ও প্রবণতা অনুযায়ী বিভিন্ন দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পায়।

এতে আরও বলা হয়, বিষয়ের ধারণায়ন আধুনিক না হওয়ার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্যের বড় ক্ষেত্র হলো বিজ্ঞান শিক্ষা।ব্যানবেইসের ২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী- বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় নবম শ্রেণির ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্রী মাত্র ১৫ শতাংশ। কাজেই বিভাগ বিভাজন বড় ধরনের জেন্ডার বৈষম্য তৈরি করেছে।

এ ধরনের বৈষম্য কমাতে কিছু সুপারিশও করেছে গণসাক্ষরতা অভিযান। তাতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ও নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষায় রূপান্তর, দুই মন্ত্রণালয় ভেঙে একক মন্ত্রণালয় করা, দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

>> প্রয়োগমুখী উচ্চশিক্ষা জরুরি

বিবিএসের সবশেষ জরিপ অনুযায়ী—দেশে সার্টিফিকেটধারী বেকার প্রায় ২৬ লাখ। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েও বেকার প্রায় ৮ লাখ। এ বেকারত্ব দূর করতে উচ্চশিক্ষায় প্রয়োগমুখী শিক্ষার কোর্স চালু করা প্রয়োজন। এতে মৌলিক যোগ্যতা বাড়বে এবং কর্মহীনতার হার কমবে।

তাছাড়া উচ্চশিক্ষার সংস্কারে ইউজিসিকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযান। তাদের মতে, ইউজিসি যেন মনিটরিং, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং বাজারনির্ভর ডিগ্রি ও কোর্স প্রণয়ন করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রেখে তাদের কাজের এখতিয়ার দিতে হবে।

>> শিক্ষাপ্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ

দেশে শিক্ষা-সংক্রান্ত দুটি মন্ত্রণালয় বিদ্যমান, যা শিক্ষার উন্নয়নে পৃথক হয়নি। বরং শিক্ষার ধারাবাহিক সংস্কারে একক মন্ত্রণালয় থাকা ভালো। একক মন্ত্রণালয় করে শিক্ষাকাঠামো পরিচালনার মতো সংস্কারের জোর দাবি জানিয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযান। পাশাপাশি শিক্ষায় রূপান্তর নিশ্চিত ও টেকসই করতে জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বিনিয়োগের বা বরাদ্দ রাখারও দাবি জানানো হয়।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও এডুকেশন ওয়াচের সদস্যসচিব রাশেদা কে চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ, ঢাবির আইইআর’র অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদৎ হোসেন প্রমুখ।


আমার বার্তা/এমই