শেষ হলো আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ সিজন ২-এর অফলাইন রেজিস্ট্রেশন
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:

আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ সিজন ২-এর অফলাইন রেজিস্ট্রেশন ক্যাম্পেইন ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে এবং ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে এপ্রিল মাসে। এই আসরে ৮টি বিভাগে ৪০টি জেলার শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
একইসাথে, ৪০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে এবং ১১০টি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অফলাইন রেজিস্ট্রেশন বুথ ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় ৩০০০ ক্যাম্পাস এম্বাসেডর ও ২০০০ মেন্টর শিক্ষক মিলিতভাবে এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আনুমানিক ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর কাছে তথ্য পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও চীনের শিক্ষার্থীরাও এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে, আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের পরীক্ষা বিভিন্ন পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। মার্চ মাসে সিলেকশন ও জেলা রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে; এরপর এপ্রিল মাসে বিভাগীয়, সেমিফাইনাল এবং এপ্রিলের শেষে গালা রাউন্ডের মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষনা করা হবে।
রেজিস্ট্রেশন ক্যাম্পেইনের সমাপ্তি হিসেবে, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি-এ তিন দিনব্যাপী বিশেষ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘Empowering Future with Technology’ শীর্ষক সেমিনারের মাধ্যমে এই ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সেমিনারে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন, একাডেমিক ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে বিদ্যমান দক্ষতার ব্যবধান কমানো এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির ভূমিকা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বক্তারা বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি দিন দিন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ড্রোন টেকনোলজি, ডেটা অ্যানালিটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং, সাইবার সিকিউরিটি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, ডেটা অ্যানালিটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান, যা আগামী দশকে প্রযুক্তিভিত্তিক চাকরির বাজারে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। বক্তারা শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন, একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান। তিনি জানান, "বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র সাধারণ শিক্ষা নয়, প্রযুক্তিগত দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। যারা নতুন প্রযুক্তি শিখবে, তারা ভবিষ্যতে অগ্রণী হয়ে উঠবে।" তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, প্রচলিত পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন শিক্ষার্থীদের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। এই দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল নিজেদের ক্যারিয়ার গঠনে সফল হবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। তাঁর মতে, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একত্রে কাজ করতে হবে যাতে প্রযুক্তি-নির্ভর দক্ষতা শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
সেমিনারে অন্যান্য বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান নিপু, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান, বিইউবিটি-এর সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স বিভাগের ডীন প্রফেসর ড. মুন্সী মাহবুবুর রহমান। ডা. তানজিবা রহমান জানিয়েছেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং ও প্রযুক্তিভিত্তিক ক্যারিয়ারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শন করে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারবে।’
ডিন প্রফেসর ড. মুন্সী মাহবুবুর রহমান জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবশ্যই প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে, নইলে ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’ তিনি ভবিষ্যতে আইসিটি অলিম্পিয়াড-এর সকল ইভেন্টে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান নিপু আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-এর সিজন ৩ নিয়ে আলোচনা করেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির বিশ্বে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার উপায় ও ক্যারিয়ার গঠনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন শিক্ষার্থীদের এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত থাকা উচিত এবং ঘোষণা করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে মালেশিয়ার সাইন্স সিটিতে ঘুরে আসার ব্যবস্থা করা হবে। সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলামও জানান, "বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উচিত প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হওয়া এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালানো। প্রযুক্তি-নির্ভর দক্ষতা ছাড়া বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।"
সেমিনারের সঞ্চালন করেন নিশাত আনজুম সারা এবং ব্যাসিস স্টুডেন্ট ফোরাম অফ বিইউবিটি চ্যাপ্টার ক্লাব প্রেসিডেন্ট জুবায়ের বিন আহমেদ, যিনি সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে যে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিনামূল্যে ওয়ার্কশপ, মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার-ভিত্তিক ট্রেনিং সেশন আয়োজন করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সাল থেকে আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে এবং একাডেমিক ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে বিদ্যমান স্কিল গ্যাপ কমাতে অবিরাম কাজ করে আসছে, যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কার্যকর প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা যায়।
আমার বার্তা/এমই