এবার কারিগরি শিক্ষকরা দিলেন ৪ দিনের আল্টিমেটাম

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫, ১৬:০২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

দীর্ঘদিনের অবহেলা, বৈষম্য ও হয়রানির অভিযোগ তুলে ১৫ দফা দাবিতে এবার আন্দোলনে নেমেছেন দেশের কারিগরি, কৃষি ডিপ্লোমা ও বিএম শিক্ষকরা।

রোববার (৪ মে) আগারগাঁওয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচিতে এসে শিক্ষকরা তাদের দাবি জানান। এ সময়, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান শিক্ষকদের মৌখিক আশ্বাস দিলেও, দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে সারা দেশে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষক নেতারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষকদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— নবায়ন ফি কমানো, এমপিওভুক্তিতে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা, সব ট্রেডকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনা, ৫ আগস্টের পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করা, অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সঠিক জনবল নিয়োগ, কারিকুলামের মূল বইয়ের সংকট নিরসন, শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করা।

শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, কারিগরি শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের অভাব রয়েছে। যা সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বৈষম্যমূলক। তাই এই পরিস্থিতিতে সব শিক্ষকরা সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত সমাধান দাবি করেছেন। যদি আগামী ৮ মের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়ন করা না হয়, তবে কঠোর আন্দোলন করার কথাও জানান তারা।

শিক্ষকদের ১৫ দফা দাবিগুলো হলো :
১. গত ২০১৯ ও ২০২২ সালে এমপিওভুক্ত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের জমা দেওয়া আবেদনকারী যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন আগামী ৮ মের মধ্যে এমপিওভুক্ত করতে হবে।

২. কারিগরি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে সব ট্রেডকে এমপিওভুক্তির আওতায় নিতে হবে। ট্রেডভিত্তিক এমপিওভুক্তির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠান এমপিও চালু করতে হবে।

৩. ৫ই আগস্টের পূর্বের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিদপ্তর থেকে বদলির ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. কৃষি ডিপ্লোমার অধ্যক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সৃষ্ট সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে।

৫. অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো কার্যকর করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে জনবল কাঠামো নির্ধারণের প্রথা বন্ধ করতে হবে।

৬. কারিগরি সচিবের নিকটাত্মীয় পরিচয়ে তৃতীয় গ্রেডের পরিচালক (ভোকেশনাল) পদে একজন পলিটেকনিকের পঞ্চম গ্রেডের শিক্ষককে বসানো হয়েছে। অথচ মন্ত্রণালয়ের আদেশ থাকা সত্ত্বেও পঞ্চম গ্রেডের ডি.ডি-এমপিও পদে টি.এস.সি অধ্যক্ষ আইয়ুব সাহেবকে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি। এই বৈষম্য দূর করতে হবে।

৭. শিক্ষকদের অভিযোগ, বর্তমানে কারিগরি অধিদপ্তর শিশির বাবু বা বিমল বাবুর অনুসারীরা পরিচালনা করছেন। এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হবে।

৮. গত ৫০ বছরে কোনো বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি বা জাতীয়করণ করা হয়নি। অথচ সরকারের কাছে এই খাত সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে, যা হাস্যকর। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

৯. যদি এমপিও সমস্যার সমাধান কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর করতে না পারে, তবে এই দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) দেওয়া হোক।

১০. সাধারণ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ভবন তৈরির জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হলেও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তেমন কোনো বরাদ্দ নেই। এই বৈষম্য দূর করতে হবে।

১১. মাউশি ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও কারিগরি শিক্ষকদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ নেই। কারিগরি শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. অধিকাংশ কারিগরি শিক্ষা কারিকুলামের মূল বইয়ের অভাব রয়েছে। ফলে যথাযথ পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত মূল বইয়ের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. মাউশি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নবায়ন ফির তুলনায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পাঁচগুণ বেশি নবায়ন ফি আদায় করে থাকে। এই অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করতে হবে।

১৪. কারিগরি শিক্ষা বোর্ড জরিমানার নামে ছাত্র ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গলাকাটা ফি আদায় করে থাকে। এই ধরনের শোষণ বন্ধ করতে হবে।

১৫. কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে, যা মনিব-ভূতের মতো। এই ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।

 

আমার বার্তা/এল/এমই