লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে যাচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

দশম গ্রেডের দাবিতে এবার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে যাচ্ছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ আগামী ৮ নভেম্বর থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিতভাবে এই কর্মসূচি সফল করতে আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছে। 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় ধাপে সুপারিশ পাওয়া সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেড নির্ধারণসহ তিন দফা দাবি আদায়ে নতুন করে আহ্বান করা আন্দোলন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকরাও সহকারী শিক্ষকদের এই আন্দোলনে সংহতি জানান।

একটার পর একটা আন্দোলনে যখন সরকার বিব্রত অবস্থায়, ঠিক সেই সময় নতুন করে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিলেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা। এদিকে গত ২১ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চলছে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি। এর আগে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়িভাড়া, উৎসবভাতা ও মেডিক্যাল ভাতার দাবির আন্দোলন চালিয়েছেন। এই অবস্থা শেষ হতে না হতেই নতুন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন।  

সহকারী শিক্ষকদের সম্মিলিত লাগাতার এই অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্বে থাকছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাসেম-শাহিন) সভাপতি প্রধান ও শিক্ষক মো. আবুল কাসেম, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ, দশম গ্রেড বাস্তবায়নের মু. মাহবুবুর রহমান এবং অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ আনোয়ার উল্যা।

শিক্ষকদের এই আন্দোলন কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন তৃতীয় ধাপে সুপারিশ পাওয়া সহকারী শিক্ষক মো. মহিব উল্লাহ।

জোটের কর্মসূচির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘বারবার আশ্বাস দিয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করছেন না। তাই আমরা আবারও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হলাম।’

লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্মিলিতভাবে এই কর্মসূচি সফল করা হবে। কোনও সাধারণ শিক্ষক এই কর্মসূচির বিপক্ষে নেই।’ তিনি বলেন, ‘যারা এখনও ভাবছেন ঘরে বসে দাবি আদায় করা সম্ভব হবে, আন্দোলন স্থগিত করে মন্ত্রণালয়ের আশায় বসে থাকলে দাবি আদায় হবে, তারা ভুলের মধ্যে রয়েছেন।’

লিপি আরও বলেন, ‘পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, নার্স, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা পান। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন লড়াই করেও ১১তম গ্রেড পায়নি। তাই এখন দশম গ্রেড নির্ধারণসহ তিন দফা দাবি আদায়ে আমরা মাঠে নামছি।’

কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘আমরা এবার সম্মিলিতভাবে লাগাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছি। তিন দফা দাবি আদায়ে এই কর্মসূচি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে আগামী ৮ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর থেকে থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি ছিল। কিন্তু কিছু শিক্ষক না বুঝেই আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছিল— যা আত্মঘাতী ছিল।’

মো. শামছুদ্দিন মাসুদ আরও বলেন, ‘কয়েক দফা আন্দোলনের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আপাতত ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয় এবং সে মোতাবেক গত ৭ আগস্ট অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠায়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন না করে নবগঠিত পে-কমিশনে পাঠায়। কিন্তু দুই মাস পার হলেও দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষকরা পে-কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে পে-কমিশন জানিয়ে দেয়—শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের কাজ পে-কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত নয়, এটা সার্ভিস কমিশনের কাজ। পে-কমিশনের অপারগতার পর শিক্ষকরা আবারও তাদের তাদের দাবি দশম গ্রেডে ফিরে যায় এবং তা বাস্তবায়নে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে।’

সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের সমন্বক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নিয়োগ যোগ্যতা অনুযায়ীই আমরা সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড দাবি করছি। বারবার আমরা মন্ত্রণালয়ে এর যৌক্তিকতাও প্রমাণ করেছি। কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের কথা উঠলেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের খাজাঞ্চিতে টান পড়ে।’

দশম গ্রেড বাস্তবায়নের আরেক সমন্বয়ক মোহাম্মদ আনোয়ার উল্যা বলেন, ‘বারবার প্রতারিত হওয়ায় শিক্ষকরা এখন রাজপথকেই বেছে নিয়েছেন। আশা করি কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের পালস বুঝবেন।’

আগামী ৮ নভেম্বর সকাল ১০টায় সব শিক্ষককে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান এই শিক্ষক নেতা।

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের তৃতীয় ধাপে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের পক্ষে মো. মহিববুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী ৮ নভেম্বরের আন্দোলন হবে সম্মিলিতভাবে। লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে দশম গ্রেড নির্ধারণসহ তিন দফা দাবিতে। আমরা পূর্ণ সংহতি জানিয়েছি আন্দোলন কর্মসূচিতে থাকবো।’

শিক্ষক নেতারা আরও জানান, আগে থেকেই দশম গ্রেডের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষকরা। কিন্তু সরকার কোনও গুরুত্বই দেয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সময় প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড নির্ধারণের কারণে সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষকদের বিষয়টি ছেড়ে দেয় পে-কমিশনের ওপর। অথচ গ্রেড পরিবর্তন তাদের কাজের পরিধি নয়। এই বাস্তবতায় শিক্ষকরা ২০টি বেতন গ্রেড ভেঙে ১২টি গ্রেড নির্ধারণে পে-কমিশনের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। কিন্তু এর নিশ্চয়তা পাননি শিক্ষকরা।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড নির্ধারণের পর ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ ও পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা নিরসনের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা গত ১৭ অক্টোবর থেকে ‘আমরণ অনশন’ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগের দিন শিক্ষক সংগঠনগুলোর একটি অংশ গত ২৭ জুন সরকারের আশ্বাসে অনশন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এতে শিক্ষকদের অন্য সংগঠনগুলোর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ হন সাধারণ শিক্ষকরাও।

প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবি

(১). সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি দশম গ্রেড প্রদান। (২). ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান। (৩). শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
 
আমার বার্তা/এল/এমই