ডেঙ্গু যদি হয়েই যায়

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ২১:১৫ | অনলাইন সংস্করণ

  প্রফেসর ডা. এ কে এম মূসা

ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত রোগ ও বর্তমান সময়ে একটা আতংকের নাম । সাধারণত বর্ষাকালে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে এ রোগ হয়।

ডেঙ্গুর লক্ষণ কি ?
জ্বর (১০১-১০৪ ডিগ্রী) ,শরীর ব্যাথা,তীব্র মাথা যন্ত্রনা,চোখ ব্যাথা,চোখ লাল হয়ে যাওয়া ,ক্ষুধামন্দা ,বমি বমি ভাব ,বমি করা, গলা ব্যাথা ,কাশি ইত্যাদি। শরীরে র‍্যাশ দেখা দেয়া ।

তীব্র ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ :-
* প্রচন্ড পেট ব্যাথা
* ক্রমাগত বমি
* অনিয়ন্ত্রিত পাতলা পায়খানা
* রক্তক্ষরণ
* দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া
* নিস্তেজ হওয়া
* বিরক্তি ও অস্তিরতা

ডেঙ্গু হলে ভয় কিসের?
সাধারণত : জ্বর ১-৭ দিন থাকতে পারে

সংকট কাল: জ্বর ছেড়ে যাওয়ার ২৮-৪৮ ঘন্টা স্থায়ী হয়। হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়া।
১. ডেঙ্গু-হেমোরেজ: শরীরের বিভিন্ন স্থান হতে ব্লিডিং হওয়া
২. ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম: প্লাজমা লিকেজ ,রক্তনালী থেকে জলীয় অংশ বেড়িয়ে গিয়ে প্রেসার কমে যায় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না দিলে মৃত্যুর সম্ভবনা থাকে।


পরীক্ষা নিরীক্ষা:
জ্বরের একদিন পরেই CBC ও NS1 Ag Antigen Test করাতে হবে। রোগী ৪-৫ দিন পর আসলে CBC ও Anti Dengue Antibody আইজিজি ও আইজিএম Test করাতে হবে । রোগীর  জটিলতা হলে অন্যান্য  Test  করার প্রয়োজন হবে।

ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর করণীয়:
১. বাসায় বিশ্রাম নিবেন
২. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাবেন, গা মোছাবেন।
৩.তরল খাবার যেমন:- স্যালাইন ,ডাব,স্যুপ ,ফলের জুস,দুধ খাবেন- দুই থেকে আড়াই লিটার। অন্যান্য খাবারও খাবেন।
৪. মনিটরিং -দিনে কয়েকবার BP চেক করুন,পালস্ প্রেসার- উপরের ও নিচের প্রেসারের গ্যাপ -২০ মিমি এর কম হলে ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রস্রাবের পরিমাণ লক্ষ্য করুন -কম হলে ও ব্লাড প্রেসার কমে গেলে শিরায় স্যালাইন
দিতে হবে । দ্রুত ডাক্তার ও হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
৫. প্রতিদিন CBC Test  করাতে হবে।

ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে:
* প্রচন্ড পেট ব্যাথা
* প্রচন্ড বমি
* বডি স্প্রেসে পানি জমা যেমন- পেটে পানি জমা,
বুকে পানি জমা।
* ব্লিডিং হলে
* হেমাটোক্সিট বেড়ে যাওয়া
* প্লাটেলেট এর পরিমাণ ৫০,০০০ এর নিচে নামলে
* প্রসাব কমে গেলে

কখন ICU তে ভর্তি করাতে হবে:
১. Dengue Shock Syndrome
২. প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হলে
৩. লিভার ,ব্রেইন, হার্ট, কিডনির জটিলতা দেখা দিলে
৪. প্রচন্ড ব্লিডিং হলে।

ডেঙ্গু হলে কি করবেন না :-
আতংকিত হবেন না । ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিবেন।
১. ব্যাথা নাশক ঔষধ  NSAIDS খাবেন না।
২.অত্যাধিক ফ্লুইড খাবেন না।
৩.প্লাটেলেট নিয়ে আতংকিত হবেন না । প্লাটেলেটের পরিমাণ ১০,০০০ হলেও যদি হেমাটোক্সিট ঠিক থাকে, রক্তক্ষরণ না হয় তাহলে অপেক্ষা করুন, প্লাটিলেটের পরিমাণ ১/২ দিনের মধ্যে বাড়তে শুরু করবে।
৪. স্টারয়েড জাতীয় ঔষধ খাবেন না।
অধিক শতর্কতা:
 গর্ভবতী নারী ,শিশু কিশোর ,ডায়াবেটিস রোগী ও অন্যান্য ক্রনিক অসুখ থাকলে

সুরক্ষা :
ডেঙ্গুর কোন ভ্যাকসিন নেই । ডেঙ্গুর প্রতিরোধে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও নিধনই হচ্ছে মূল কাজ।
১. ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুলের টব,ফুলদানি,ছোট ছোট ডাবের খোসা ইত্যাদি ঘরে ও আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা।
২. সরকারী পর্যায়ে মশা নিধন অভিযান জোড়দার করা।
৩. ঘুমানোর সময় মশারীর নিচে ঘুমানো।
৪.ডেঙ্গু রোগীকে দিনের বেলা মশারীর নিচে ঘুমাতে হবে তাহলে বাসার অন্য সদস্যদের ডেঙ্গু কম হবে।
শেষ কথা:  
জ্বর হলে যত তাড়াতাড়ি  সম্ভব ডেঙ্গু Test  করাতে হবে। Dengue  হলে যথাযথ পরিচর্যা ও চিকিৎসা দিলে মৃত্যঝুঁকি কম হবে।


লেখক : প্রফেসর ডা. এ কে এম মূসা                                                                                                                        অধ্যাপক ,মেডিসিন বিভাগ
চেম্বার: আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড ,মিরপুর -১০ ,ঢাকা।
হটলাইন: ১০৬৭২,০৯৬৭৮৮২২৮২২