ফ্যাটি লিভারের প্রতিকার ও পদক্ষেপ

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:২২ | অনলাইন সংস্করণ

  ডা. বুলবুল রহমান:

ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় বর্তমানে অনেকেই ভুগছেন। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা আবার দু’ভাগে বিভক্ত– অ্যালকোহলিক ও নন-অ্যালকোহলিক। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার মূল কারণ হলো মদ্যপান। তবে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার অ্যালকোহল সেবনের সঙ্গে যুক্ত নয়। যে কারও এ সমস্যা হতে পারে। জীবনযাত্রার অনিয়মের ফলেই এ রোগ বেশি দেখা দেয়।

>> ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ও প্রতিকার

বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ১৮ বছরের তরুণ থেকে ৭০ বছরের বয়স্ক মানুষের ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এর রিপোর্ট পাই। বর্তমান বিশ্বে ফ্যাটি লিভার একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে এ রোগের হার ২৫% অর্থাৎ প্রতি ৪ জনে ১ জন আক্রান্ত। অন্যতম কারণ হলো অ্যালকোহল ও নন-আলকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিস ।

>> অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ

মদ্যপান পশ্চিমা দেশে অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে ৯০% ফ্যাটি লিভার বিকশিত হয়। এবং ২৫% এ্যলকোহলিক হেপাটাইটিস এবং ১৫% লিভার  সিরোসিস তৈরি করে। যারা মদ্যপান ছেড়ে দেন তাদের অনেকের ঝুঁকি কমে যায়।

>> নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ

যাদের মদ্যপানের ইতিহাস থাকে না এবং ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত তারা এই  গ্রুপে পড়েন। যখন লিভারের ৫ থেকে ১০ পার্সেন্টের বেশি চর্বি জমা হয় তাকে বলা হয়   ফ্যাটি লিভার। চাহিদার অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ ও কায়িক পরিশ্রমের অভাব, জিনগত প্রবণতা ,ইনসুলিন প্রতিরোধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টাইপ  ২ ডায়াবেটিসের কারণে এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে।

>> ঝুঁকিতে কারা

মেটাবলিক সিনড্রোমে যারা ভোগেন

 ১)  পেটের সামনের এলাকার স্ফীত স্থূলতা
 ২ ) উচ্চ রক্তচাপ
 ৩) ডায়াবেটিস ও প্রি ডায়াবেটিস
 ৪)  কোলেস্টেরলের অসুবিধা -এলডিএল বেশি এইচডিএল কম ও ট্রাই গ্লিসারাইড বেশি।
 নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এর প্রায় ১০-১৫ % নন অ্যালকোহলিক স্ট্যোয়াটোহেপাটাইটিস ( NASH) এ রূপান্তরিত হয । লিভার কোষ গুলো স্ফীত হয় - প্রদাহের সৃষ্টি হয় ও  ধ্বংস হয় - পরিবর্তে লিভারে শক্ত টিস্যু জমা হয়(ফাইব্রোসিস) হয়। পুরো লিভার ফাইব্রোসিস হলে সেটাকে সিরোসিস বলে।  

>> ন্যাশ এর লক্ষণ

১) কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে।
২) পেটের ডান দিকে উপরের অংশে অস্বস্তি ভাব
 ৩) ক্লান্তি
 ৪)দুর্বলতা।

>> পরীক্ষা-নিরীক্ষা

 ১) আলট্রাসনোগ্রাম করলে বেশিরভাগ মানুষের এ রোগ নির্নয় করা যায়। লিভারে ৫-১০ % ফ্যাট জমা হলে গ্রেড ১,১০-২৫% জমা হলে গ্রেড ২ ও ৩০%এর বেশি জমা হলে -গ্রেড ৩  হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
 ২) লিভার ফাংশন টেস্ট( এ এস টি  ও  এ এল টি)
 ৩) ফাইব্রোস্ক্যান এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা । বিশেষ প্রয়োজনে লিভার বায়োপসি করার দরকার হয়।

বর্তমান পৃথিবীতে ও বাংলাদেশে নন অ্যালকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিস  (NASH)  -সিরোসিস ও ক্যান্সারের লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।

>> ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা কি

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে এর কোন কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জীবন যাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তন ই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

১) শরীরের ওজন কমানো (কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ) প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায়।
২) প্রতিদিন ব্যায়াম করা --অন্তত ৩০ মিনিট দৈনিক একটু জোরে হাঁটা কার্যকর একটি ব্যায়াম ওজন কমানোর জন্য।
৩ ) এল,ডি,এল কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইড সহনীয় পর্যায়ে রাখা ।
৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
৫ ) অ্যালকোহল  পরিহার করা
৬) ধূমপান পরিহার করুন।

>> কি খাবেন  

১) শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, পাউরুটি, আলু ইত্যাদি পরিমাণে কম খেতে হবে।
২) শাকসবজি, তাজা ফলমূল স্বাভাবিক পরিমাণে খেতে পারবেন।
 ৩) পর্যাপ্ত মাছ (তৈলাক্ত অংশ ছাড়া) খেতে পারবেন। সামুদ্রিক মাছ, ইলিশ মাছ, রূপচাঁদা এবং অন্যান্য মাছ পরিমিত সেবন করুন ।
  ৪) জটিল শর্করা ওটস মিল জবের আটা খাবেন।

>> কি কম খাবেন

১) চিনি
২) ভাঁজাপোড়া,চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, যেকোনো ফাস্ট ফুড আপনার জন্য ক্ষতি কারক।
৩) লবন
৪) লাল মাংস -গরু, খাসি,। ইত্যাদি
৫) কোমল পানীয়, আইসক্রিম ,পেস্ট্রি। ইত্যাদি কম খাবেন।
এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে রাখা জরুরি, তিনি লক্ষণ বুঝে ওষুধ প্রয়োগ করবেন, নতুবা পরর্বতীতে  ভয়েরও কারণ হতে পারে।

 

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট  (বিএইচএমএস) ঢাকা, (বিশেষ  প্রশিক্ষণ : ইন্ডিয়া)

 

আমার বার্তা/ডা. বুলবুল রহমান/এমই