বিশ্ব স্ট্রোক দিবস : মিনি স্ট্রোক হলে কিভাবে বুঝবেন

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২২:১০ | অনলাইন সংস্করণ

  ডা. এম.এস. জহিরুল হক চৌধুরী:

আজ ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য গ্রেটার দেন”

মিরি স্ট্রোকের ধরণ?

মিনি স্ট্রোক (গরহর ঝঃৎড়শব) বা ট্রান্সিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক (টিআইএ) হল স্ট্রোকের পূর্ববর্তী অবস্থা। বেশিরভাগ মানুষই  স্ট্রোক এর পূর্ববতী উপসর্গ গুলো সম্পর্কে জানেন না।  যদিও বা জানেন তবে এ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। যদিও হিসেব বলছে, এই টিআইএ-কে যদি প্রথম থেকে চিহ্নিত করা যায়, তবে স্ট্রোক হওয়ার দুর্ঘটনা আটকানো যায়।

স্ট্রোক কি?

মাথার কোনও রক্তনালীতে স্থায়ীভাবে রক্তজমাট বাঁধলে সেই অংশে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রক্তচলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের সেই নির্দিষ্ট অংশে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত পৌঁছায় না। ফলে সেই অংশটি কাজ করতে পারে না। এই হল স্ট্রোক। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, কাউকে চিনতে না পারা, মাথা ঘোরানো, হাত-পা নড়াতে না পারা, শরীরের ভারসাম্য হারানো, কথা বলতে না পারা ইত্যাদি লক্ষণ  গুলো  দেখা যায়।

স্ট্রোক একটি ভয়ঙ্কর রোগ। এই রোগ একজন মানুষের জীবনকে মুহুর্তে ওলটপালট করে দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটিকে আটকানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে টিআইএ চিহ্নিত করতে পারলে সবথেকে ভালো হয়। গবেষণা প্রাপ্ত তথ্য বলছে, টিআইএ (ঞওঅ) হওয়ার পরের তিন মাসে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে ২ থেকে ১৭ শতাংশ। আর টিআইএ আক্রান্ত প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ ১ বছরের মধ্যেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাই এই রোগটি থেকে সচেতন থাকতে হবে এর প্রতিকারে। ট্রান্সিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক বা টিআইএ-এর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোনও একটি রক্তনালীর মধ্যে সামান্য কিছু সময়ের জন্য রক্ত জমাট বাঁধে। তাই কিছুক্ষণের জন্য রোগীর শরীরে দেখা দেয় লক্ষণ। তারপর নিজে থেকে জমাট বাঁধা রক্ত বিলিন হয়ে যায়। ফলে কমে যায় উপসর্গ। টিআইএ-এর উপসর্গ প্রায় স্ট্রোকেরই মতো। কাউকে চিনতে না পারা, চোখে ঝাপসা দেখা, শরীর অবশ হয়ে যাওয়া, হাত-পা নাড়াতে না পারা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হয় ক্ষণস্থায়ী। সাধারণত টিআইএ-এর লক্ষণ ১ ঘণ্টার মধ্যেই চলে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।

কেন হয়?

স্ট্রোক এবং টিআইএ এই দুই ক্ষেত্রেই দায়ী হলো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, কোলেস্ট্রলের মতো অসুখ। এছাড়া পরিবারের কারো স্ট্রোক আক্রান্ত হয়েছে এমনটা হলেও স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়াও ধূমপান, মদ্যপান, ওজন বেশি ইত্যাদি বিষয়গুলিও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

টিআইএ কি

ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মতো অসুখ থাকলে টিআইএ-এর লক্ষণ দেখা দিলে অবেহলা করা যাবে না।  এ সংক্রান্ত চিকিৎসকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। অনেক সময় অনেকের টিআইএ ধরা পড়ে না। এমনকী কোনও পরীক্ষাতেও বোঝা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা একমাত্র বুঝতে পারেন।

চিকিৎসা

স্ট্রোক বা টাইআইএ যাই হোক না কেন, চিকিৎসকের কাছে প্রথমেই আসতে হবে। টিআইএ ধরা পড়লে রোগীর সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরল পরিক্ষা করে দেখা হয়। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত ঔষধ দিয়ে রোগীর মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্ত যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসা যত দ্রুত করা হবে তত দ্রুত রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা করার পর রোগীর স্পিচ থেরাপি, ফিজিওথেরাপিরও দরকার হতে পারে।


লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল।