আরও ছয়টি লিনাক মেশিন আসছে, প্রতিটি বিভাগে ক্যান্সার চিকিৎসা চালু
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে– এমন বাস্তবতায় অধিকসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
তিনি জানান, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে প্রতিটি বিভাগীয় হাসপাতালে ক্যান্সার, কিডনি ও ডায়ালাইসিস চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যাবশ্যক লিনাক মেশিন (লিনিয়ার অ্যাক্সেলেটর) কেনায় নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস ২০২৫’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
নূরজাহান বেগম বলেন, ‘শুধু স্তন ক্যান্সার নয়, এখন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই প্রবণতা রোধে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে এবং আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির কোনো বিকল্প নেই। আমাদের এমন চিকিৎসক তৈরি করতে হবে, যারা ৬৪ জেলায় ক্যান্সার সচেতনতা ও চিকিৎসা কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে পারবেন।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ভাষায়, ‘ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য লিনাক মেশিন খুবই প্রয়োজনীয়। সরকার ৩৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি লিনাক মেশিন ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এগুলো দেশে পৌঁছাবে।’
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকে ধন্যবাদ জানিয়ে নূরজাহান বেগম বলেন, ‘সরকার এই উদ্যোগে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে উপদেষ্টা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানলে অবাক হবেন, একটি ফাইল একজনের কাছেই এক মাস ১০ দিন ছিল। তাহলে বলুন, উন্নয়ন কাজ কীভাবে এগোবে?’ তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় গুরুত্বারোপ করে নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমাদের টাকার অভাব রয়েছে, তাই অনেক সময় বিদেশে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব হয় না। কিন্তু বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দেশে এনে তো আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি– এক্ষেত্রে তো কোনো বাধা নেই।’
তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর হয়ত আমরা কেউ দায়িত্বে থাকব না। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ এনজিও আপনাদের পাশে থাকবে সবসময়। আপনারা যখনই ডাকবেন, আমরা সাড়া দেব।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘স্তন ক্যান্সার শনাক্ত হলে শতভাগ নিরাময় সম্ভব, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে। এজন্য লজ্জা বা ভয় না পেয়ে সময়মতো স্ক্যানিং করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ৩০ বছরের নিচেও অনেক নারীর মধ্যে স্তন ক্যান্সার দেখা যাচ্ছে। তাই বয়সের দিকে না তাকিয়ে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, সহ-সভাপতি ছিলেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন।
অনুষ্ঠান শেষে বিনামূল্যে স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্য পরামর্শ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
আমার বার্তা/এমই