সরকারি দমন-পীড়নের নিন্দা জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক :

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। ফাইল ছবি

জেনেভা-জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক আজ বাংলাদেশ সরকারের কাছে জরুরীভাবে গত সপ্তাহের বিক্ষোভ দমন ও ভয়াবহ সহিংসতা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ প্রকাশের আহবান জানিয়েছেন এবং সমস্ত আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রম যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম ও মান মেনে চলে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে (চাকরিতে কোটা বিষয়ে) সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র প্রতিবাদ ও যুব আন্দোলনে ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি- যাদের অনেকে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা গেছে, কমপক্ষে দুজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন অনেকে। বিরোধী দলীয় নেতাসহ কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আরও বলেন ‘‘আমরা অবগত হয়েছি সরকার সমর্থকদের দ্বারা অসংখ্য মানুষ সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যাদের সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

“জনগণের মনে যে গভীর আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। যেসব কারণে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছে তা বন্ধে আলোপ-আলোচনার সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকারের প্রতি আমার আহবান, প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নীতিমালা ও মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে।”

তিনি আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে ইন্টারনেট চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যাতে মুক্ত যোগাযোগ নিশ্চিত করতে সাংবাদিক এবং মিডিয়াপ্রতিষ্ঠানগুলো সহ জনসাধারণ অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে অবশ্যই নিহত, আহত ও আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাঁদের পরিবারের কল্যাণের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে।

হাইকমিশনার আরও বলেন, নির্বিচার পদক্ষেপ যেমন- উদ্দেশ্যমূলকভাবে দীর্ঘসময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। যেখানে রাষ্ট্রসমূহের বাধ্যবাধকতা রয়েছে নাগরিকের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমবেশ, অন্যান্য অধিকার চর্চা যার অন্তর্ভুক্ত সংগঠন ও চলাচলের স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাঅধিকার এবং অর্থনৈতিক অধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।

‘‘ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে সেই সম্পর্কে জনগণ জানতে পারছে না এ কারণে তাদের কৃতকর্মের দায়মুক্তির আশংকা বাড়ছে।’

মানবাধিকার লঙ্ঘনের সকল অভিযোগ বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের জন্যে তিনি আহবান জানান। এ বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে তিনি জানান।

তিনি সকল কর্তৃপক্ষের প্রতি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এবং যারা প্রতিবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের প্রতি কোন রকম প্রতিশোধ মূলক ব্যবস্থা যাতে নেওয়া না হয় তার নিশ্চয়তা প্রদানের আহবান জানান।  ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘনরোধ এবং জনগণের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার সুরক্ষায়,দীর্ঘমেয়াদে সিকিউরিটি সেক্টরের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

টুর্ক আশা করেন, গত রবিবার সুপ্রিম কোট সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি যথেষ্ট সংকুচিত করার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে - গত সপ্তাহের প্রতিবাদের ভিত্তিতে যার ভিত রচনা - তা ক্ষোভ প্রশমনে আস্থার পরিবেশ তৈরি এবং অর্থবহ ও অংশগ্রহণমূলক সংলাপের দিকে যেতে আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্র প্রসারিত করবে যাতে সমস্যার গভীরতা ও ক্ষোভের কারনগুলোর সুরাহা করা যায়।


আমার বার্তা/এমই