ট্রাম্প নাকি মাস্ক: কার হাতে তুরুপের তাস?
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৫, ১১:২২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ ও তীব্র বাকযুদ্ধের পর উভয়ের ঘনিষ্ঠ মহলে প্রশ্ন উঠেছিল—দুজনে কি এই সম্পর্কের অবনতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন? অনেকেই সেই আশাই করছেন। কিন্তু, গত বৃহস্পতিবার এই দ্বন্দ্ব যখন ব্যক্তিগত আক্রমণে গড়ায়, তখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে—মাস্ক বিষয়টিকে ‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব’ হিসেবেই দেখছেন।
শুধু ট্রাম্পের সমালোচনা নয়, বরং রিপাবলিকানদের নতুন ‘এজেন্ডা বিল’ নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মাস্ক। তিনি বলেছেন, যারা এই ‘জঘন্য আইন’ সমর্থন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নামতে পারেন তিনি। এমনকি ‘তৃতীয় রাজনৈতিক দল’ গঠনের ভাবনাও প্রকাশ করেছেন এ বিলিয়নিয়ার। পাশাপাশি দাবি করেছেন, তার সমর্থন ছাড়া ট্রাম্প ২০২৪ সালে জয়ী হতে পারতেন না।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মাস্ক লিখেছেন, ট্রাম্পের মেয়াদ আর সাড়ে তিন বছর, কিন্তু আমি আরও ৪০ বছর থাকবো। কাজেই ভবিষ্যৎ ভেবে সিদ্ধান্ত নিন, নইলে আফসোস করবেন।
তাহলে কে এগিয়ে?
দ্বন্দ্ব যদি সত্যিই চলতে থাকে, তাহলে আপাতত স্পষ্ট—প্রধান রিপাবলিকান নেতৃত্ব বাধ্য হলে ট্রাম্পকেই বেছে নেবে। কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়।
ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত বৃহস্পতিবার কিছুটা সময় নিয়ে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন, যদিও মাস্কের সমালোচনা করেননি।
ট্রাম্পপন্থি আরও কয়েকজন নেতাও মাস্ককে বাদ দেওয়ার সুযোগ নিয়েছেন। স্টিভ ব্যানন তো একধাপ এগিয়ে ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের’ কথাও বলেছেন। যদিও মাস্ক বর্তমানে মার্কিন নাগরিক।
ট্রাম্প বনাম মাস্কের প্রভাব
মাস্ক যদিও তুলনামূলকভাবে রাজনীতিতে নতুন, তবে বছরখানেক ধরে তিনি ডানপন্থি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘বাটলার, পেনসিলভানিয়া হামলার প্রচেষ্টা’র পর তার সম্পৃক্ততা বেড়েছে।
ট্রাম্পের প্রভাব অবশ্য আরও গভীর। রিপাবলিকান পার্টি এখন অনেকটাই তার নেতৃত্বনির্ভর। তিনি যেকোনো অবস্থান পাল্টালেও অনুসারীরা তার সঙ্গেই থাকেন। ২০২০ সালের ‘ভোট চুরি’ সংক্রান্ত ভিত্তিহীন দাবিকেও পার্টির বড় অংশ মেনে নিয়েছে।
মাস্কও কম শক্তিশালী নন
মাস্কের জনপ্রিয়তাও কম নয়। সাম্প্রতিক একাধিক জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে মাস্কের গ্রহণযোগ্যতা ট্রাম্পের তুলনায় খুব পিছিয়ে নেই।
রয়টার্স/ইপসস জরিপ অনুযায়ী, ৫৪ শতাংশ রিপাবলিকান ট্রাম্পকে ‘খুব পছন্দ’ করেন, মাস্কের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪৩ শতাংশ।
মারকেট ইউনিভার্সিটি জরিপ বলছে, সাধারণ মার্কিনিদের মধ্যে মাস্ককে ‘খুব পছন্দ’-এর হার ২২ শতাংশ, ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ।
মাস্কের নেতৃত্বে চালু হওয়া ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) বিভিন্ন উদ্যোগও এখনো রিপাবলিকানদের মধ্যে জনপ্রিয়। নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের জরিপে দেখা যায়, রিপাবলিকানদের ৬৩ শতাংশ মাস্কের কাটছাঁট কার্যক্রমকে ‘পুরোপুরি সমর্থন’ করেন।
রয়েছে সীমাবদ্ধতাও
তবে মাস্ককে নিয়ে দ্বিধাও স্পষ্ট। কোইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৮ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করেন মাস্কের আরও বেশি ক্ষমতা থাকা উচিত। অর্থাৎ, তাকে সবাই পছন্দ করলেও ট্রাম্পের মতো অন্ধ আনুগত্য এখনো গড়ে ওঠেনি।
এক্স প্ল্যাটফর্মের ক্ষমতা
তারপরও মাস্কের হাতে রয়েছে এক্স নামের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম, যা বর্তমান মার্কিন রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলছে। মাস্ক এক্স-এর অ্যালগরিদম ও কনটেন্ট মডারেশনের মাধ্যমে নিজের পছন্দের পোস্টকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং সমালোচকদের দমনও করেছেন।
তাছাড়া, বৃহস্পতিবার মাস্ক ট্রাম্পকে জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে যুক্ত করার অভিযোগও প্রচার করেছেন, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তার সক্ষমতা দেখায়।
এছাড়া মাস্ক তার বিপুল সম্পদকে ‘প্রাথমিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের’ পেছনে ব্যয় করতেও প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে তাকে একেবারে বাতিল করাও সহজ নয়।
সামনে কী?
এখন দেখার বিষয়—মাস্ক ও ট্রাম্প সত্যিই রিপাবলিকান পার্টিকে এক পক্ষে দাঁড় করানোর পথে নিয়ে যান কি না। আপাতত তুরুপের তাস ট্রাম্পের হাতেই। কিন্তু মাস্কের রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা এবং তার মিডিয়া ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাও অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
সূত্র: সিএনএন