যুদ্ধবিরতির চাপের মধ্যেই উত্তর গাজায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫, ১০:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চাপ অব্যাহত রাখলেও দখলদার ইসরায়েল উত্তর গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাজা সিটি এবং জাবালিয়ার বাসিন্দাদের দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসির দিকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, “তাদের অভিযান পশ্চিমে আরও তীব্র এবং বিস্তৃত হবে।”
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার দুপুরের আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তথাকথিত “নিরাপদ অঞ্চল” আল-মাওয়াসিতে এক হামলায় তিন শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছে।
নিহত শিশুদের বাবা জিয়াদ আবু মারুফ রয়টার্সকে বলেন, “এক মাস আগে ইসরায়েলের নির্দেশেই আমরা এই নিরাপদ আশ্রয়ে এসেছিলাম।”
তাদের মা ইমান আবু মারুফ বলেন, “আমরা যখন মাটিতে ঘুমিয়ে ছিলাম, তখনই আমাদের ওপর বোমা ফেলা হয়। আমার সন্তানরা নিহত হয়েছে, আর বাকিরা হাসপাতালে ভর্তি।”
এই সামরিক তৎপরতা এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে নতুন করে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। রোববার ট্রাম্প পুনরায় “গাজায় চুক্তি সম্পন্ন করা” এবং “জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার” জন্য আহ্বান জানান।
তবে হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, আলোচনা এখনো স্থগিত রয়েছে। কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা আশা করছেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ চুক্তি অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলায় ট্রাম্পের মন্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প এই মামলাকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র” বলে অভিহিত করেছেন, যা যুদ্ধবিরতির আলোচনায় দেরি করাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
এর জবাবে ইসরায়েলের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বলেছেন, ট্রাম্পের “একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।”
মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে, যা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১১ সপ্তাহ পর আংশিকভাবে শিথিল করা হয়।
ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হলেও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এর তীব্র নিন্দা করেছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট টুমা এই নতুন ব্যবস্থাকে “মৃত্যুপুরী” বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, কেবল জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার মাধ্যমেই সাহায্য বিতরণ সুশৃঙ্খলভাবে সম্ভব।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৫৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
আমার বার্তা/জেএইচ