শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিপর্যয়, শত শত ফ্লাইট বাতিল
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম শাটডাউনের (সরকারি অচলাবস্থা) জেরে বিমান চলাচলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেওয়ায় দেশটির ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে শত শত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দেশটির ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা) থেকে ফ্লাইট বাতিল কার্যকর হয়। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এ নির্দেশনার আওতায় পড়বে না।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শাটডাউনের (সরকারি অচলাবস্থা) জেরে নেওয়া এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের প্রায় ৪ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৭০০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকান এয়ারলাইনস, ডেলটা, সাউথওয়েস্ট ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট। যদি অচলাবস্থা চলতে থাকে, আগামী মঙ্গলবার থেকে বাতিলের হার ৬ শতাংশে এবং ১৪ নভেম্বরের মধ্যে তা ১০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে এফএএ।
আমেরিকান এয়ারলাইনস জানিয়েছে, শুক্রবার ২২০টি ফ্লাইট বাতিলের ফলে প্রায় ১২ হাজার যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অধিকাংশকে বিকল্প ফ্লাইটে নেওয়া হয়েছে।
তবে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী রবার্ট আইসম জানান, প্রাথমিক কাটছাঁট যাত্রীদের জন্য তেমন বিঘ্ন ঘটাবে না। তবে পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তা সমস্যাজনক হয়ে উঠবে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনস জানিয়েছে, শুক্রবার তাদের ১৮৪টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। শনিবার ১৬৮ ও রবিবার ১৫৮টি ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রভাবিত অর্ধেক যাত্রীকে চার ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় বুক করা সম্ভব হয়েছে।
পরিবহন সচিব শন ডাফি জানান, শুরুতে শুক্রবার থেকেই ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, হঠাৎ বড় কাটছাঁট আরও বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ফলে ধাপে ধাপে ৪ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ডাফি আরও বলেন, পাইলটদের কাছ থেকে আমরা বেশি অভিযোগ পাচ্ছি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে প্রতিক্রিয়া ধীর হচ্ছে, কন্ট্রোলাররা চাপে রয়েছেন। নিরাপত্তা সূচকগুলো ভুল দিকে যাচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এফএএ বৃহস্পতিবার রাতে (স্থানীয় সময়) প্রভাবিত বিমানবন্দরগুলোর তালিকা প্রকাশ করে। কার্যকর হওয়ার মাত্র ১২ ঘণ্টা আগে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে অনেক এয়ারলাইনস ক্ষোভ প্রকাশ করে, তবে সংস্থাটি তাদের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করে।
চলমান অচলাবস্থায় ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী বিনা বেতনে কাজ করছেন। এফএএ প্রশাসক ব্রায়ান বেডফোর্ড জানিয়েছেন, যে কোনও দিনে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কন্ট্রোলার কাজে উপস্থিত হচ্ছেন না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুক্রবার ছয়টি বিমানবন্দরে কন্ট্রোলার অনুপস্থিতির কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। একই সঙ্গে রকেট উৎক্ষেপণ কার্যক্রমেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে এফএএ।
এজেন্সিটি সতর্ক করে বলেছে, যদি নির্দিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত প্রভাব পড়ে, তাহলে কাটছাঁট পরিকল্পনা সংশোধন করা হতে পারে এবং প্রয়োজনে ব্যস্ত বিমানবন্দরে ব্যক্তিগত বিমান চলাচলও ১০ শতাংশ পর্যন্ত সীমিত করা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ফ্লাইট বাতিলের প্রাথমিক ধাক্কা সামলানো গেলেও, নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত যদি অচলাবস্থা অব্যাহত থাকে, তা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আকাশপথে বড় সংকট সৃষ্টি করবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সরকারি শাটডাউন ও বেতনবিহীন কর্মীদের অনুপস্থিতিতে এফএএর সক্ষমতা ক্রমশ কমছে, যা বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
আমার বার্তা/জেএইচ
