পাকিস্তানে সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিতর্ক, আরও এক বিচারপতির পদত্যাগ
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

পাকিস্তানের বিচারপতি শামস মেহমুদ মির্জা শনিবার লাহোর হাইকোর্টের (এলএইচসি) বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর আগে বিতর্কিত ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী আইনে পরিণত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি পদত্যাগ করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের প্রধান বিচারক হিসেবে পদত্যাগ করলেন শামস মেহমুদ। খবর ডনের।
পদত্যাগপত্রে এই বিচারপতি লিখেছেন, সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীর পর নীতিগতভাবে এবং বিবেকের কারণে আমি বিচারক হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহী নই। আমি লাহোর হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছি।
২০১৪ সালে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এই বিচারপতির ২০২৮ সালে অবসর নেওয়ার কথা ছিল। তিনি লাহোর হাইকোর্টে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় পঞ্চম স্থানে ছিলেন এবং আদালতের প্রশাসন কমিটির সদস্য ছিলেন।
বিচারপতি শামস মেহমুদ মির্জা ছিলেন প্রয়াত বিচারপতি জিয়া মেহমুদ মির্জার ছেলে। জিয়া মেহমুদ মির্জা ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে ভিন্নমত প্রদানকারী একমাত্র বিচারপতি।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের দুই সিনিয়র বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ও আতহার মিনাল্লাহ ২৭তম সংশোধনীকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর হুমকি আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেন। এদিকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের আরও দুই বিচারপতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আগামী মাস থেকে তারা আদালতে নিয়মিত উপস্থিত নাও থাকতে পারেন।
দেশটিতে সংবিধানের ২৭তম সংশোধনের মাধ্যমে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে। এই সংশোধনের মাধ্যমে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোট পেয়ে বিলটি পাস হয়।
সাধারণত সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন পাসে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লাগে, কিন্তু এবারের সিদ্ধান্ত এসেছে অস্বাভাবিক দ্রুততায়। এখন প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর এটি আইনে পরিণত হবে, যা কেবল আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার।
নতুন সংশোধনীর আওতায় সাংবিধানিক মামলাগুলো এখন থেকে সুপ্রিম কোর্ট নয়, বরং সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে গঠিত নতুন কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালতে বিচার হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুপ্রিম কোর্ট সরকারবিরোধী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীদেরও ক্ষমতাচ্যুত করেছে।
পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সংশোধন বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে গভীর সংকটে ফেলবে। সংবিধানবিদ আসাদ রহিম খান বলেন, আমরা এমন এক অজানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, যা প্রায় এক শতাব্দীতে দেখা যায়নি। আজ যারা একে অপরকে অভিনন্দন দিচ্ছে, তারাই একদিন এই আদালতের দ্বারস্থ হবে যে আদালতকে তারা নিজেরাই ধ্বংস করেছে।
আরেক সংবিধানবিদ মির্জা মইজ বেগ বলেন, এই সংশোধন ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মৃত্যু ঘণ্টা’। কারণ এতে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট নতুন সাংবিধানিক আদালতে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারক নিয়োগের পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন। এতে সরকারের ওপর আদালতের নজরদারির ক্ষমতা কার্যত হারিয়ে যাবে।
আমার বার্তা/জেএইচ
