নাইজেরিয়ায় আবারও স্কুলে হামলা

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

নাইজেরিয়ায় একই সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। দেশটির একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ভোরবেলা দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এবং কর্মীকে অপহরণ করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

মধ্যাঞ্চলীয় নাইজার রাজ্যের পাপিরির সেন্ট মেরি স্কুলে ওই হামলা হয়। নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ভোরের ওই হামলায় ২১৫ জন শিক্ষার্থী এবং ১২ জন কর্মীকে অপহরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ বলেছে, স্থানীয়ভাবে ‘ব্যান্ডিট’ নামে পরিচিত অস্ত্রধারীরা শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত দুটার দিকে সেন্ট মেরি স্কুলে হামলা চালিয়ে হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে।পরিবারগুলো খবরের অপেক্ষায় থাকায় এলাকায় ভয় ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি নাইজেরিয়া আবারও সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার পাশের কেব্বি রাজ্যের একটি বোর্ডিং স্কুল থেকে ২০ জনের বেশি ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়, যাদের সবাই মুসলিম বলে বিবিসিকে জানানো হয়েছে।

এছাড়া, দেশের দক্ষিণে কওয়ারা রাজ্যের একটি গির্জায় হামলায় দুই জন নিহত এবং ৩৮ জনকে অপহরণ করা হয়।

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু এসব নিরাপত্তা ইস্যু মোকাবিলায় তার বিদেশ সফর স্থগিত করেছেন।

সর্বশেষ হামলার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ডমিনিক আদামু বলেছেন, এই ঘটনায় সবাই ভেঙে পড়েছে। তার মেয়েরা ওই একই স্কুলের শিক্ষার্থী হলেও, তারা ঠিক আছে। কিন্তু দেশের মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে খুবই আতঙ্কে আছে।

এক উদ্বিগ্ন নারী বিবিসিকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তার ছয় ও ১৩ বছর বয়সী দুই ভাগ্নিকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি শুধু চাই তারা বাড়ি ফিরে আসুক।

নাইজার রাজ্যের কর্তৃপক্ষ জানায়, সতর্কতার জন্য সব আবাসিক স্কুল সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওই প্রতিষ্ঠান সেই সিদ্ধান্ত মানেনি।

বিবৃতিতে বলা হয়, দুঃখজনকভাবে, সেন্ট মেরি স্কুল সরকারি অনুমতি ছাড়াই আবার পাঠদান শুরু করে, যা শিক্ষার্থী ও কর্মীদের অযথা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

এই অভিযোগের জবাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেনি।

পুলিশ জানিয়েছে, অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের লক্ষ্যে আশেপাশের বনাঞ্চলে তল্লাশি চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী।

এই হামলার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন, যা নাইজেরিয়া সরকার অস্বীকার করেছে।

কিছুদিন আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, নাইজেরিয়া সরকার খ্রিস্টানদের হত্যা না ঠেকালে তিনি মার্কিন সেনা পাঠাবেন।

বৃহস্পতিবার নাইজেরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নাইজেরিয়াকে “খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে জরুরি ও টেকসই পদক্ষেপ” নেওয়ার আহ্বান করেন বলে পেন্টাগন জানায়।

হেগসেথ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি মুখে ফেলতে পারে এমন সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় নাইজেরিয়ার সঙ্গে কাজ করতে চায় ওয়াশিংটন।

তবে নাইজেরিয়া সরকার বলেছে, খ্রিস্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ পুরোপুরি ভুয়া। এক কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসীরা তাদের আদর্শ যারা মানে না—মুসলিম, খ্রিস্টান বা নাস্তিক—তাদের সবাইকে আক্রমণ করে।

নাইজেরিয়া বর্তমানে বহুস্তরীয় নিরাপত্তা–সংকটে লড়ছে।

দেশটির ২২ কোটি মানুষের প্রায় অর্ধেক মুসলিম ও খ্রিস্টান, উত্তরে মুসলিমদের সংখ্যা বেশি।

‘ব্যান্ডিট’ হিসেবে পরিচিত অপরাধীচক্রগুলো দেশের বহু এলাকায় মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের মহামারি শুরু করেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলো এক দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সহিংসতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো বলছে, উত্তরাঞ্চলে হামলা বেশি হওয়ায় এসব গোষ্ঠীর অধিকাংশ শিকার মুসলিম।

দেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পশুপালক সম্প্রদায় এবং খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকদের মধ্যে প্রায়ই প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এসব সংঘাত ধর্মের চেয়ে পানি বা জমির মতো সম্পদ নিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, কওয়ারা রাজ্যের এরুকু এলাকায় গির্জা থেকে অপহৃতদের মুক্তিপণ দাবি করেছে হামলাকারীরা। অপরাধচক্রের অর্থের উৎস বন্ধ করতে মুক্তিপণ দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ করা হলেও এর কার্যকারিতা খুব কম।

এদিকে কেব্বি রাজ্যের মাগা শহরে সোমবার অপহৃত স্কুলছাত্রীদের মধ্যে দুই জন পালাতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু ২৩ জন এখনও নিখোঁজ।

আমার বার্তা/এল/এমই