পাকিস্তানে আধাসামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৩

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারে ফেডারেল কনস্টেবুলারি (আধাসামরিক বাহিনী) সদর দপ্তরে আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে এক জঙ্গি হামলায় ৩ হামলাকারী নিহত হয়েছে। পুলিশের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই হামলায় ৩ এফসি সদস্যও নিহত হয়েছেন এবং আরও দুজন আহত হয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকাল প্রায় ৮টার দিকে এই হামলা চালানো হয়। পেশাওয়ারের ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ অফিসার (সিসিপিও) ড. মিয়াঁ সাঈদ আহমদ জানান, প্রথমে তিনজন ‘জঙ্গি’ সদর দপ্তরে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। ‘এক আত্মঘাতী হামলাকারী সদর দপ্তরের গেটেই নিজেকে উড়িয়ে দেয়। অপর দুজন ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে এফসি কর্মীরা তাদের গুলি করে হত্যা করে,’ বলেন তিনি।

নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আত্মঘাতী হামলার পরপরই জঙ্গিরা (খাওয়ারিজ) ভবনের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তারা মারা যায়। হামলায় এফসি-র তিন সদস্য শহীদ এবং দুজন আহত হয়েছেন।

ঘটনার পরপরই পেশাওয়ারের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল লেডি রিডিং হাসপাতাল (এলআরএইচ) এবং খাইবার টিচিং হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এলআরএইচ-এর মুখপাত্র মুহাম্মদ আসিম নিশ্চিত করেছেন, হাসপাতালে ৬ জন সাধারণ নাগরিকসহ যারা আহত হয়ে এসেছিলেন, তারা সকলেই স্থিতিশীল আছেন।

উল্লেখ্য, এই বেসামরিক আধাসামরিক বাহিনীটি পূর্বে ফ্রন্টিয়ার কনস্ট্যাবুলারি নামে পরিচিত ছিল এবং সরকার জুলাই মাসে এর নাম পরিবর্তন করে। এই বাহিনীর সদর দপ্তরটি একটি সামরিক ক্যান্টনমেন্টের কাছে জনাকীর্ণ এলাকায় অবস্থিত।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ‘সময়োপযোগী পদক্ষেপের’ জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সময়োপযোগী পদক্ষেপ আমাদের একটি বড় ক্ষতি থেকে বাঁচিয়েছে।’ আহতদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য তিনি প্রার্থনা করেন এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সরকারের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোনো সন্ত্রাসী চক্রান্ত গুঁড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারিও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে শহীদদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি এই হামলাকে ‘বিদেশি মদতপুষ্ট খাওয়ারিজদের দ্বারা পাকিস্তানের ওপর কাপুরুষোচিত হামলা’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘খাওয়ারিজদের নির্মূল করাই দেশের প্রধান অগ্রাধিকার।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেশাওয়ারের নিরাপত্তা স্থাপনায় এটি দ্বিতীয় বড় সন্ত্রাসী হামলা। এর আগে ২০২৩ সালে পেশাওয়ারের পুলিশ লাইনসের একটি মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় ৮৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

২০২২ সালের নভেম্বরে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বাতিল করার পর থেকে পাকিস্তান, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) এবং বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। টিটিপি নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীদের ওপর হামলার অঙ্গীকার করে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু জেলার এফসি সদর দপ্তরে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে ৬ জন সৈন্য শহীদ এবং পাঁচজন জঙ্গি নিহত হয়েছিল। সামরিক বাহিনী সেই হামলাকে ‘ভারতীয় প্রক্সি ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ’ দ্বারা সংঘটিত বলে উল্লেখ করেছিল। উল্লেখ্য, নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর জঙ্গিদের বোঝাতে রাষ্ট্র ‘ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ’ শব্দটি ব্যবহার করে। - সূত্র: ডন, আল-জাজিরা

আমার বার্তা/এল/এমই