চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে জাপানকে পরামর্শ ডোনাল্ড ট্রাম্পের
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:১৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

চীনের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা আর বৃদ্ধি না করতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচিকে পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহে দুই নেতার মধ্যে এক ফোনালাপে এ বিষয়ে কথা হয় বলে দাবি করেছেন কথোপকথন সম্পর্কে অবগত একাধিক কর্মকর্তা। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তাকাইচি চলতি মাসে পার্লামেন্টে বলেন, তাইওয়ানে চীনের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ জাপানের টিকে থাকার হুমকি হয়ে উঠতে পারে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, সে রকম কোনও পরিস্থিতিতে জাপান চাইলে সেনা মোতায়েন করতে পারে। তার এমন ইঙ্গিত সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বেইজিং-টোকিওর সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক বিরোধ তৈরি করেছে।
মঙ্গলবার এক ফোনকলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি এড়ানোর অনুরোধ করেছেন বলে জানান দুই জাপানি সরকারি কর্মকর্তা। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।
একজন জানান, ট্রাম্প কোনও নির্দিষ্ট দাবি তোলেননি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাকাইচি বক্তব্য প্রত্যাহারের কথাও বলেননি। এদিকে জাপান আগেই বলেছে, তাকাইচির বক্তব্য দীর্ঘদিনের নীতিরই প্রতিফলন।
তাকাইচিকে উত্তেজনা হ্রাসে ট্রাম্পের পরামর্শের কথা প্রথম জানায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মিনোরু কিহারা বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
টোকিওর একাধিক কর্মকর্তার আশঙ্কা, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির স্বার্থে ট্রাম্প হয়ত তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন কমিয়ে আনতে পারেন, যা বেইজিংকে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠার সাহস জোগাতে পারে, যা হয়ত পূর্ব এশিয়ায় অস্থিরতা বৃদ্ধির কারণ হবে।
সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কিন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ কাজুহিরো মায়েজিমা বলেন, ট্রাম্পের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক। জাপান সবসময়ই সেই সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার একটি হাতিয়ার বা কার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ট্রাম্প-তাকাইচিকে ফোনকলটি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আরেকটি ফোনালাপের পরপরই অনুষ্ঠিত হয়। ওই আলাপে শি বলেন, চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনর্মিলন বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম অংশ।
অবশ্য গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ান বরাবরই বেইজিংয়ের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, দ্বীপরাষ্ট্রটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে কেবল তাদের জনগণ। তারা ‘পুনর্মিলন’ ধারণা স্পষ্টভাবে নাকচ করেছে।
শির সঙ্গে তাইওয়ান নিয়ে আলোচনার বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি ট্রাম্প। বরং তিনি জোর দিয়েছেন দুই দেশের “অত্যন্ত দৃঢ়” সম্পর্কের ওপর এবং বলেছেন, একটি বিস্তৃত বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।
ট্রাম্পের বরাতে হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খুবই ভালো, এবং সেটি আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপানের জন্যও ভালো। আমরা জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আরও অনেক দেশের সঙ্গে অসাধারণ বাণিজ্যচুক্তি করেছি, আর বিশ্ব এখন শান্তিতে আছে। চলুন, এটাকে এমনই রাখি!
চীনের সঙ্গে বাড়তে থাকা বিরোধ নিয়ে ট্রাম্পের নীরবতা টোকিওতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে—বিশেষ করে বেইজিং তার নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণ এড়ানোর পরামর্শে পর্যটন খাতে ধাক্কা খাওয়ার পর এ উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি পায়।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, শির সঙ্গে গত মাসে অর্জিত নাজুক বাণিজ্যসমঝোতা রক্ষা এবং আসন্ন বেইজিং সফরের আগে যেকোনও বিরোধ এড়ানোতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেশি মনোযোগী।
আমার বার্তা/এমই
