ট্রাম্পের নতি স্বীকার, এনভিডিয়ার শক্তিশালী এআই চিপ চীনে বিক্রির অনুমতি

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:২৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে এনভিডিয়াকে তাদের শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ চীনে বিক্রি করার অনুমতি দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের ফলে চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থা এবং এর সিইও জেনসেন হুয়াং-এর দীর্ঘদিনের হোয়াইট হাউস লবিং সফল হলো। এই অনুমোদনের ফলে এনভিডিয়া শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা করার সুযোগ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা বলে পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসন এনভিডিয়ার সবচেয়ে উন্নত চিপ চীনে বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু গতকাল সোমবার এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প।

সোমবার নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি চীনের প্রেসিডেন্ট সি-কে জানিয়েছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এনভিডিয়াকে তার এইচটুওও(H200) পণ্যগুলো চীন এবং অন্যান্য দেশে অনুমোদিত গ্রাহকদের কাছে এই শর্তে পাঠানোর অনুমতি দেবে যে, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। প্রেসিডেন্ট সি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন!’


ট্রাম্প জানান, বাণিজ্য বিভাগ বর্তমানে এই চুক্তির চূড়ান্ত বিবরণ তৈরি করছে এবং অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস (এএমডি) এবং ইন্টেল-এর মতো অন্যান্য চিপ কোম্পানিগুলোর কাছেও তিনি একই প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

এই চুক্তির সবচেয়ে অস্বাভাবিক দিক হলো, ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী মার্কিন সরকার চিপ বিক্রি থেকে হওয়া আয়ের ২৫ শতাংশ ভাগ পাবে, যা এনভিডিয়ার সঙ্গে পূর্ববর্তী আলোচনার মাধ্যমে সম্মত হওয়া ১৫ শতাংশের চেয়ে ঢের বেশি। অতীতেও ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক লেনদেন থেকে ফেডারেল সরকারের আর্থিক অংশ নেওয়ার অনুরূপ অভিনব পরিকল্পনা করেছেন ট্রাম্প।

এনভিডিয়ার H200 চিপগুলো এই কোম্পানির দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ শক্তিশালী চিপ এবং এটি H20 মডেলের চেয়ে অনেক উন্নত। উল্লেখ্য, H20 চিপটি চীনা বাজারের জন্য অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাসম্পন্ন মডেল হিসেবে তৈরি করা হলেও গত এপ্রিলে সেটির ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটররা। ম্যাসাচুসেটস-এর এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং নিউজার্সির অ্যান্ডি কিম বাণিজ্যমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে তাঁদের উদ্বেগের কথা বলেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, চীনে এই চিপ বিক্রির ফলে সেই দেশের নজরদারি, সেন্সরশিপ এবং সামরিক অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে শক্তি জোগানোর ঝুঁকি রয়েছে।

সিনেটর ওয়ারেন সামাজিক মাধ্যমে এনভিডিয়ার সিইও হুয়াংকে কংগ্রেসের সামনে শপথের অধীনে সাক্ষ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এনভিডিয়া সিইও জেনসেন হুয়াং দীর্ঘদিন ধরে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন এবং একাধিকবার ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনা বাজারে এনভিডিয়ার হিস্যা ৯৫ শতাংশ থেকে ০ শতাংশ-এ নেমে আসে। তিনি এই নিষেধাজ্ঞাকে বরাবরই ‘কৌশলগত ভুল’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এনভিডিয়া। একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘বাণিজ্য বিভাগ কর্তৃক যাচাইকৃত অনুমোদিত বাণিজ্যিক গ্রাহকদের কাছে H200 চিপ সরবরাহ করার এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার জন্য একটি সুচিন্তিত ভারসাম্য বজায় রাখার কাজ হয়েছে।’ এনভিডিয়া এবং ট্রাম্প উভয়েই দাবি করেছেন, এই পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান ও উৎপাদনকে সমর্থন করবে।

ট্রাম্প পূর্ববর্তী বাইডেন প্রশাসনের কঠোর রপ্তানি নীতির নিন্দা করে বলেন, ‘সেই যুগ শেষ!’ তাঁর প্রশাসন সবসময় ‘আমেরিকাকে সর্বাগ্রে’ রাখবে।

এদিকে, চীনা কর্তৃপক্ষ এখনো এই ঘোষণার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে একজন টেলিকম শিল্প বিশ্লেষক মা জিহুয়া রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস-কে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক বছরের নিষেধাজ্ঞা চীনের দেশীয় চিপ শিল্পের উন্নতি ও সম্প্রসারণে একটি বিরল সুযোগ করে দিয়েছে।