শিশুরা যেন কর্তৃপক্ষের অবহেলা-অদক্ষতার বিষয়বস্তু না হয়

১৬৯ শিক্ষার্থী নিয়ে হাইকোর্ট

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৪, ২০:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। শিশুরা যেন কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অদক্ষতা ও অপকর্মের বিষয়বস্তু না হয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রায়ের ২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত ২১ মে হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, নির্দিষ্ট বয়সসীমার পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীদের (আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের) ফিল্টার করার জন্য সফটওয়্যারে কোনো প্রোগ্রাম স্থাপন করা হয়নি। ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি ও অন্যান্য অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত করতে অনুসন্ধান করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। শিশুদের যেন কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অদক্ষতা ও অপকর্মের বিষয়বস্তু না হতে হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিকারুন্নিসার পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করবে। অনুসন্ধান কমিটি আরও ভালো ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করার এবং অপরাধীদের খুঁজে বের করার পরামর্শ দেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন অনুযায়ী চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবকে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি করতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি করতে হবে। বাকি দুই সদস্যের মধ্যে একজন শিক্ষাবোর্ড থেকে অপরজন আইটি এক্সপার্ট বুয়েট থেকে যুক্ত করতে হবে। এ রায়ের অনুলিপি শিক্ষাসচিব, বুয়েট উপাচার্য এবং শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

আদালতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রিট আবেদনকারী দুজন অভিভাবকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামীম সরদার ও ইফফাত আর খানম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। আর রিট আবেদনকারী ১৩৬ জন অভিভাবকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও জহিরুল ইসলাম।

ভিকারুননিসায় ভর্তি নিয়ে বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগ এনে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি-ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি রিট করেন। সে রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। তার ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) একটি স্মারক হাইকোর্টে উপস্থাপন করে।

মাউশির আদেশ মতে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ করেনি। ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার প্রক্রিয়া ছিল বিধিবহির্ভূত। এসব ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ১৫৯ জন। এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে শিগগির মাউশিকে অবহিত করার অনুরোধ করা হলো।

এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করে। ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের পর এখন অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে শূন্য আসনে ভর্তি নিতে গত ৬ মার্চ নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগ গত ২০ মার্চ হাইকোর্টে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেন। এসময় পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল ও অপেক্ষমাণদের ভর্তির ওপর স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ভর্তি বাতিল হওয়া ১২০ শিক্ষার্থীর পক্ষে আরেকটি রিট করা হয়। সে রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৫ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। এরপর পৃথক রুলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে গত ২১ মে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।


আমার বার্তা/এমই