‘সুগার ড্যাডি’ চক্র দমনে লিগ্যাল নোটিশ জারি

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বাংলাদেশে সম্প্রতি এক মারাত্মক সামাজিক, নৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে যা সাধারণ মানুষের কাছে ‘সুগার ড্যাডি’ হিসেবে পরিচিত। এই অপরাধমূলক প্রবণতায় সমাজের কিছু ধনী, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সমাজের তরুণী বিশেষ করে আর্থিকভাবে দুর্বল বা সামাজিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মেয়েদের অবৈধ আর্থিক প্রলোভনের মাধ্যমে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক, শারীরিক শোষণ, মনস্তাত্ত্বিক নিপীড়ন এবং ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইলের জালে আটকে ফেলছে।

বিষয়টি এতটাই উদ্বেগজনক যে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনায় এটি এখন দেশব্যাপী এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং এর ভয়াবহ সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রতি রেজিস্ট্রি ডাক ও ইমেইলের মাধ্যমে নোটিশ পাঠান।

সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কাছে যথা লিগ্যাল নোটিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এরবিআর) চেয়ারম্যান এবং আইজিপিকে নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, এই তথাকথিত সুগার ড্যাডিরা তরুণীদের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। অর্থের অভাবে, পরিবারিক চাপের কারণে বা প্রলোভনে পড়ে অনেক মেয়ে এমন এক অস্থির মানসিক অবস্থায় জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখান থেকে বের হতে পারছে না।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই মেয়েদের কাছে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, দামি ফোন/আইফোন, ব্র্যান্ডেড পোশাক, গয়না, গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ এবং বিলাসবহুল ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে।

এই সব অর্থের কোনো বৈধ উৎস নেই, কর নথিতে প্রদর্শিত হয় না এবং অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি কালো টাকা, অবৈধ লেনদেন বা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আসছে। অর্থনীতিতে এভাবে অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রদর্শিত অর্থের প্রবাহ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি ও কর প্রশাসনের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে যে, অনেক তরুণীকে মানসিক চাপ, ভয়ভীতি বা প্রলোভনের মাধ্যমে গোপনে অশ্লীল বা ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে এবং পরে সেগুলো ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল, যৌন শোষণ ও হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। এ ধরনের ব্ল্যাকমেইলিং শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয় বরং পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে। অনেক মেয়ে এই চক্র থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিবারে অপমান, সামাজিক লাঞ্ছনা, নিরাপত্তাহীনতা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংসের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, সুগার ড্যাডিরা কেবল তরুণী ও নারীদের শোষণেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি দেশের বহু পরিবারকে অস্থির করে তুলছে। অনেক সুগার ড্যাডির স্ত্রী ও সন্তানরা দীর্ঘদিন মানসিক চাপ, অবহেলা, পারিবারিক নির্যাতন ও অপমানের শিকার হচ্ছে, যার পরিণতিতে বিবাহবিচ্ছেদ, পারিবারিক ভাঙন এবং গভীর সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এটি সরাসরি বাংলাদেশের পরিবারব্যবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানছে।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বিভিন্ন অভিযোগে উঠে এসেছে যে কিছু ক্ষেত্রে এই তরুণীদের ব্যবহার করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, কূটনীতিক, বিদেশি নাগরিক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। এটি শুধু নৈতিক অপরাধ নয় বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তা, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং গোয়েন্দা তথ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সরাসরি হুমকি। ফলে বিষয়টি একটি ব্যক্তিগত বা সামাজিক সমস্যা থেকে বেড়ে এখন একটি জাতীয় নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান তার আইনি নোটিশে সরকারকে অবিলম্বে কঠোর ও সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, সিআইডি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং এনবিআরের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করে এই চক্র ভেঙে দিতে হবে।

একই সঙ্গে তরুণীদের কাছে প্রবাহিত অস্বাভাবিক অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস তদন্ত করা, আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করা, ব্ল্যাকমেইল করা ভিডিও-ছবি শনাক্ত করে অপসারণ করা এবং এই সুগার ড্যাডিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নোটিশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।

আমার বার্তা/এল/এমই