ডায়াবেটিস থেকে চিরতরে মুক্ত থাকার প্রাকৃতিক উপায় জেনে নিন

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ১১:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

আধুনিক জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে ডায়াবেটিসের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু বয়স্ক নয়, তরুণরাও ডায়াবেটিসের শিকার হচ্ছে এবং এর কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। তবে, কিছু প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করলে এই মারাত্মক রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে দাবি গবেষকদের।

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের। টাইপ ১ ডায়াবেটিস ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না অথবা উৎপন্ন হলেও সঠিকভাবে কাজ করে না। কিন্তু ডায়াবেটিসের লক্ষণ বুঝতে পারলে ঘরোয়া উপায়ে এর প্রতিকার সম্ভব।

ডায়াবেটিস থেকে আজীবন মুক্ত থাকার ১৫টি প্রমাণিত উপায় নিচে দেওয়া হলো-
পেঁয়াজের অবদান-

ব্রিটিশ ওয়েবসাইট এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ খাওয়া ডায়াবেটিসের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম সস্তা ও কার্যকর পদ্ধতি। পেঁয়াজের নির্যাস রক্তে শর্করার পরিমাণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম। মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালিয়াম সিপা ও মেটফরমিনের মতো প্রাকৃতিক উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেঁয়াজ ডায়াবেটিসের জন্য সস্তা এবং সহজলভ্য একটি উপাদান।
নয়নতারা ফুলের গুরুত্ব-

নয়নতারা ফুলের ব্যবহার ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এক কাপ পানিতে মাঝারি আকারের নয়ন তারা ফুল ও মূল ভিজিয়ে রাখুন রাতভর। সকালে পানিটা ফুটিয়ে অর্ধেক করে নিন এবং প্রতিদিন সকালে ও রাতে এই জল খান। নিয়মিত ব্যবহারে ঘন ঘন প্রস্রাব ও অন্যান্য উপসর্গ কমে আসবে বলে দাবি চিকিৎসকদের।
পনির ফুলের কার্যকারিতা-

ভারতীয় গবেষণায় দেখা গেছে, পনির ফুল ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ১০-১২টি পনির ফুলের জল খেলে শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে। এটি শরীরের অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ করে তোলে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
করলার উপকারিতা-

করলা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে করলার রস খেলে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা হয় এবং ডায়াবেটিস কমে।
দারচিনি-

যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য দারচিনি খুবই উপকারী। এটি অগ্নাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্তের সুগার লেভেল কমায়। দারচিনির গুঁড়া চা, পানি বা অন্য পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
অ্যালোভেরা-

অ্যালোভেরা জেলে ফাইটোস্ট্যারলস নামক শক্তিশালী উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফাইটোস্ট্যারলসের অ্যান্টিহাইপার গ্লাইসেমিক প্রভাব আছে যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী। হলুদ, তেজপাতা ও অ্যালোভেরা জেল জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন।
আম পাতা-

৩-৪ টি আম পাতা জলে ফুটিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এই মিশ্রণটি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। আম পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখতে পারেন। দিনে দুবার আধা চামচ করে এই আম পাতার গুঁড়ো খেতে পারেন।
মেথি-

ডায়াবেটিসের সবচেয়ে ভালো একটি প্রতিকার হচ্ছে মেথি। ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ ১ গ্লাস জলে ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। সকালে মেথি বীজ-সহ জল পান করুন। মেথি বীজের জৈব উপাদান ইনসুলিনকে উদ্দীপিত করে। এছাড়াও এতে উচ্চ মাত্রার ফাইবার থাকে বলে স্টার্চকে গ্লুকোজে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে যা ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সাহায্য করে।
চর্বিযুক্ত মাছ-

চর্বিযুক্ত মাছের তালিকায় রয়েছে স্যালমন, সার্ডিন, হেরিং ইত্যাদি মাছ। যে সব মাছ ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পূর্ণ, যে সব মাছ ডিএইচএ এবং ইপিএ-এর বড় উৎস সে সব মাছই পারে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এছাড়াও নিয়মিত এই সব মাছ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কিন্তু কমে যায় অনেকটাই। এছাড়াও এই সব খাবারে থাকে ওমেগা-৩ব ফ্যাটি অ্যাসিড। যা আমাদের শরীরের জন্য কিন্তু খুবই ভাল।
ডুমুর-

পুষ্টিবিদের মতে, ডায়াবেটিসের রোগীদের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে ডুমুর। ডুমুরের মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মেসি অ্যান্ড বায়োসায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় অনুযায়ী, ডুমুরে হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে ডুমুর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতিতেও উপকারী।
গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স-

‘গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স’ নামের এ ওষধি গাছ ডায়াবেটিস সারাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। চীনে এন্টি ভাইরাস হিসেবেও এটির ব্যবহার আছে। ‘গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স’ গাছটির বোটানিক্যাল নাম হলেও ইংরেজিতে একে ‘সাবুঙ্গা’ এবং চীনে এটিকে ‘জিয়ান ফেঙ উইই’ বলা হয়। যাদের ডায়াবেটিস, প্রেশার এবং কোলেস্টেরল আছে তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২টি পাতা সেবন করলে এসব রোগ থেকে বাঁচা যাবে। তবে যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন এবং গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত তাদেরকে সকালে খালি পেটে ২টি পাতা ও রাতে শোবার আগে ২টি পাতা সেবন করতে হবে।
কফি পান করুন-

বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিদিন অন্তত দুই কাপ কফি পান করলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসে ২৯%। তবে চিনি ছাড়া কফি পান করতে হবে। কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এই কাজ করে।
ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন-

আজকাল চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া যায় নানা ধরনের ফাস্টফুড। যা দেখে হয়তো লোভ সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু ফ্রাইস, পিজ্জা, বার্গার এর মতো ফাস্ট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে স্থুলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল, হজমে সমস্যা এবং হৃদরোগের মতো নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এসব খাবার দেহে ইনসুলিনের মাত্রায়ও ক্ষতিকরভাবে হেরফের ঘটিয়ে দিতে পারে। যা থেকে ডায়াবেটিসও হতে পারে।
ধুমপান ত্যাগ করুন-

স্ট্রেসের মতোই ধুমপানও নানা ধরনের মারাত্মক রোগের আরেকটি কারণ। ফুসফুস ক্যান্সার এর মতো ভয়ঙ্কর রোগের পাশাপাশি ডায়াবেটিসেরও একটি কারণ ধুমপান। সুতরাং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে না চাইলে আজই ধুমপান ছেড়ে দিন।
শরীরচর্চা ও প্রচুর হাঁটাহাঁটি করুন-

শরীরচর্চা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই একটা মাত্র রোগেই আমরা শরীরচর্চা বা ব্যায়ামকে ওষুধ হিসাবে দেখে থাকি।  প্রতিদিন অন্তত ৪০মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন। কারণ একজন ডায়াবেটিসের রোগী যখন হাঁটতে শুরু করেন বা ব্যায়াম করতে শুরু করেন তখন তার শরীরের ইনসুলিন এর কার্যকারিতা কমে যায়। তখন তার নিজের দেহের ইনসুলিন নিজের দেহে বেশি করে কাজ করতে শুরু করে। প্রতিটি কোষগুলো তখন ইনসুলিনের প্রতি সেনসিটিভ হয়ে যায়। তখন আপনাকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হবে না।

আমার বার্তা/জেএইচ