চল্লিশোর্ধ্ব নারীর নানা শারীরিক ও মানসিক সংকট

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৫, ১৩:৫২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

সময়ের পালে দোলা দিয়ে নিজের বেগে এগিয়ে চলে বয়স। তাকে কোনোভাবেই আটকে রাখা যায় না। শৈশব পেরিয়ে আসে কৈশোর, এরপর যৌবন, আর সবশেষে বার্ধক্য। প্রতিটি বয়সের আলাদা সৌন্দর্য আর পরিবর্তন আছে। সেটি পুরুষ নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই। একজন চল্লিশোর্ধ্ব নারী সমাজে মধ্যবয়স্কা হিসেবে পরিচিত। তার বয়সের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। শরীর আর মনের কিছু পরিবর্তনও হয় এই বয়সে।

চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তাদের স্বাস্থ্য, কর্মজীবন, পরিবার এবং সামাজিক জীবনের বিভিন্ন দিকে নানা পরিবর্তন আসে। এই বয়সী নারীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: স্বাস্থ্য সমস্যা, কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ, পরিবারে পরিবর্তন, সামাজিক সমর্থন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন। চলুন আরও বিস্তারিত জেনে নিই-

চল্লিশোর্ধ্ব নারীর সংকট:
স্বাস্থ্য সমস্যা:

চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের বেশিরভাগেরই মেনোপজ (ঋতুবন্ধ) হয়। এর কারণে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন- গরম লাগা, ঘুমের সমস্যা, মেজাজের পরিবর্তন, এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের মেজাজ তুলনামূলক খিটখিটে হয়ে যায়। কমে যায় ঘুমের পরিমাণ। শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। মূলত হরমোনের ওঠা-নামার কারণেই এমন সমস্যাগুলো হয়।

এই সময় নারীদের স্তন ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অস্টিওপরোসিসের মতো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই শরীর নিয়ে চল্লিশের পর হেলাফেলা না করাই শ্রেয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি।

কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ:

কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং সব কাজ করা তরুণী মেয়ে আর চল্লিশে পা রাখা নারী কর্মীটির মধ্যে কিছুটা হলেও পার্থক্য থাকে। অনেকক্ষেত্রে এই বয়সী নারীরা নানা কারণে পিছিয়ে পড়তে পারেন। কর্মক্ষেত্রে বয়স এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।

সময়ের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। তারপরও কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা কাজে লাগাতে পারা এবং পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্য মাঝ বয়সী নারীদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
পরিবারে পরিবর্তন:

চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা সন্তানদের বড় হতে দেখতে পারেন। কেউ কেউ সন্তানের বিয়েও দিয়ে থাকেন। সন্তানকে বড় হতে দেখা কিংবা পরিবারের নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ার বিষয়টি তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। এসময় তাদের জীবন এবং পরিবারে নতুন পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক সময় চল্লিশোর্ধ্ব নারী কর্মজীবন এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খান।  
সন্তান না থাকা নিয়ে মানসিক চাপ:

অনেক সময় চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা সন্তানহীন থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে সন্তান না থাকার কারণে সামাজিক ও পারিবারিক চাপে পড়েন তারা। এই চাপ মোকাবেলা করা চল্লিশোর্ধ্ব নারীর জন্য বেশ কষ্টকর বলা যায়।
চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের জন্য কিছু পরামর্শ:
স্বাস্থ্য পরীক্ষা:

চল্লিশের পর নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হাড়ের ক্ষয় এসব বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
সামাজিক সমর্থন:

চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা তাদের পরিবার, বন্ধু এবং সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সামাজিক সমর্থন পেতে চান। তার পরিবর্তনগুলোকে সবাই সহজভাবে গ্রহণ করে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখবেন এমনটা আশা করেন। বন্ধুমহল এবং পরিবারের কাছ থেকে সহযোগিতা এবং বোঝাপড়া এই বয়সী নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন:

মনের খেয়াল রাখা জরুরি চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক খাদ্য, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা:

কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-বৈষম্য এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আত্ম-বিশ্বাস ও সহনশীলতা বজায় রাখা জরুরি।
পরিবারের সাথে সম্পর্ক:

মধ্যবয়স্কা নারীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মেজাজের পরিবর্তনকে পরিবারের সদস্যরা সহজভাবে নিলে অনেক পারিবারিক ঝামেলাই এড়ানো সম্ভব।

একজন চল্লিশোর্ধ্ব নারী নানা শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের ভেতর যান। কখনো কখনো তিনি নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কখনো ভোগেন হতাশায়। এই বয়সী নারীরা চান আশেপাশের মানুষগুলো তাদের দোষ কম ধরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।


আমার বার্তা/জেএইচ