এমপি আজীমের মেয়ে-ভাইকে নেওয়া হচ্ছে কলকাতায়

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ১১:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের যে ফ্ল্যাটে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়েছিল সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে ৪ কেজি ‘টুকরো মাংস’ পাওয়া গেছে। এগুলো এমপি আজীমের দেহাংশ কি না তা নিশ্চিত করতে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে কলকাতায় নেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান। এমপি আজীম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে তার নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের একটি গোয়েন্দা দল কলকাতায় অবস্থান করছে।

তিনি বলেন, এমপি আজীমের পরিবারের কাউকে কলকাতায় নিয়ে আসা ছাড়া দ্রুততম সময়ে লাশ শনাক্তকরণ সম্ভব নয়। তার মেয়ে ডরিনকে ইতোমধ্যেই বিষয়টি জানানো হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ডরিন এবং এমপির ভাই কলকাতায় আসতে পারেন।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলের দিকে সঞ্জিভা গার্ডেন্সের ওই ফ্ল্যাটের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি চালিয়ে এবং সুয়ারেজ পাইপ ভেঙে মাংসের টুকরোগুলো উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ওই মাংসগুলো এমপি আজীমের কিনা তা দেখতে ফরেনসিক ল্যাবে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা তদন্তের জন্য যেদিন প্রথম কলকাতায় এসেছি সেদিনই সঞ্জিভা গার্ডেন্স পরিদর্শনে যাই। এরপর আমরা আবাসনের প্লাম্বারের খোঁজ করি। কারণ, আমাদের সেপটিক ট্যাংক এবং সুয়ারেজ সিস্টেম দেখার প্রয়োজন ছিল। এর পাশাপাশি আমাদের কাছে থাকা তথ্যগুলো সিআইডিকে জানাই। আজকেও আমরা সিআইডিকে ঘটনাস্থলে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করার অনুরোধ জানাই। সে অনুযায়ী সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এবং সুয়ারেজ সিস্টেম ফ্ল্যাশ করে বেশ কিছু মাংস উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে মাংসের টুকরোগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সেটা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে এবং ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এরপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি আমাদের এমপি আজীমের লাশ কি না।

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঘাতকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। একটা মামলা করতে গেলে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য যেমন দরকার তেমন শরীরের পুরো অংশ না হলেও খণ্ডিত কিছু অংশ প্রয়োজন হয়। সেজন্য আমাদের অনুরোধে সিআইডি সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংস উদ্ধার করেছে।

মাংসের সাথে চুল উদ্ধার হয়েছে বলে যে খবর পাওয়া গেছে তা নিয়ে ডিএমপির ডিবিপ্রধান জানান, তদন্তের জন্য এক টুকরো টুকরো মাংস হলেই হয়। আগে ফরেনসিক হোক, তারপর ডিএনএ হোক, তারপর বলা যাবে এটি কার দেহের অংশ।

এদিকে তদন্তে আরও অগ্রগতি আনতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো হবে বলেও জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপরই নিখোঁজ হন তিনি।

বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাঁচদিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীমের নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ তিনবারের এই সংসদ সদস্যের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে হঠাৎ খবর ছড়ায় কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতরেও পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে সেখানে তার মরদেহ মেলেনি।

এদিকে আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে খুন হওয়ার ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।