পরীমণির সঙ্গে রাত্রীযাপনে চাকরি হারালেন এডিসি সাকলায়েন

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের জেরে এবার চাকরি হারালেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনারের (এডিসি) দায়িত্বে থাকা গোলাম সাকলায়েন।

পরীকাণ্ডে আলোচনা শুরুর পর প্রথমে সাকলায়েনকে ডিবি থেকে সরিয়ে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে ঝিনাইদহ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়। এবার পরীকাণ্ডে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো সেই সাকলায়েনকে।

গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খালা-২ শাখা থেকে উপসচিব রোকেয়া পারভিন জুঁই স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়।

শৃঙ্খলা শাখার  এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাকলায়েন ধারাবাহিকভাবে নায়িকা পরীমণির বাসায় নিয়মিত রাত্রি যাপন করতে শুরু করেন। বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমণির বাসায় সাকলায়েন অবস্থান করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট দেখে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ আগস্ট, ২০২১ তারিখ ভোর ৬টা থেকে ২ আগস্ট, ২০২১ তারিখ রাত ৩ টা পর্যন্ত রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণেও এমন প্রমাণ পাওয়া যায়।

সাকলায়েন বিবাহিত ও এক সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও পরীমনির সাথে তার বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমনির সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মত ঘটনা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তা প্রচারিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুগ্ন হয়েছে। উল্লিখিত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

২০২১ সালের ১ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েনের সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমনি। সেখানে প্রায় ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে পরীমনি-সাকলায়েনকে নিয়ে একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পায়।

ওই ফুটেজে দেখা গেছে, রাজাবাগ পুলিশ অফিসার্স কলোনির মধুমতি ভবনের গেটের সামনে ১ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে একটি সাদা গাড়ি এসে থামে। লাল রংয়ের টি-শার্ট পরা একজন প্রথমে নামেন। এরপর কোলে একটি কুকুরসহ সাদা রংয়ের জামা পরে নামেন নায়িকা পরীমনি।

রিসিপশনে থাকা সদস্যদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে দুজন লিফটে প্রবেশ করেন। পরে গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ট্রলি ব্যাগ। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে ওই ভবনের সামনে আবার আসে পরীমনির গাড়ি। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরীমনির পরনে ছিল কালো রংয়ের পোশাক।

বোট ক্লাব মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে পরিচয় ডিবি কর্মকর্তা সাকলায়েনের। সেই সূত্র ধরে গড়ে উঠেছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এরপর পরীমনির বাসায় যাতায়াত শুরু করেন তিনি। মাঝে মাঝে গাড়ি নিয়ে বের হতেন দুজনে। সর্বশেষ নায়িকা সাকলায়েনের বাসায় গিয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় কাটান।

পরীমনি ও গোলাম সাকলায়েনকাণ্ডে বিব্রত হয় পুলিশ বাহিনী। তাকে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) থেকে বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয় তখন।

মো. গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রেনিং) মিয়া মাসুদ করিমের নেতৃত্বে কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) হামিদা পারভীন ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) রুমানা আক্তার। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে পরিমনি-কাণ্ডের পরে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) পশ্চিম বিভাগে বদলি করা হয়। পরে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে তাকে ঝিনাইদহের ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়েছে।

২০২১ সালের ১৩ জুন উত্তরা বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। পরদিন উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। তখন পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে। তখনই পরীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় সাকলায়েনের। এরপর দ্রুতই সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে।

পরীমনি-কাণ্ডের পর খবর বেরোয়- এই নায়িকার সঙ্গে প্রায়ই রাতে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যেত সাকলায়েনকে। রাত গভীর হলে গাড়ি নিয়ে বের হতেন তারা। মাঝেমধ্যে পরীমনির বাসায়ও যেতেন সাকলায়েন।

ওই বছরের ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। পরীমনির নানা নাটকীয়তা শেষে সেখান থেকে তাকে ও তার ঘনিষ্ঠ প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পরিমনি ও রাজ বিয়ে করে সংসার করছেন। তাদের একটি ছেলে সন্তানও হয়েছে। আর পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েন চাকরি করছেন ঝিনাইদহে।

আমার বার্তা/জেএইচ