শাহবাগসহ আশপাশের চার মোড়ে কোটাবিরোধীদের অবরোধ

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৭:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক:

রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল এবং হোটেল কন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করেছে চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা। এতে এই চার মোড়ের আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। একই সময়ে চানখাঁরপুল মোড় অবরোধ করেন অমর একুশে হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, শহীদুল্লাহ্ হলসহ আশপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ওদিকে শাহবাগের অবরোধ সৃষ্টির পরপরই তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করেন।

৩টা ৫০ মিনিটে শাহবাগ মোড় দখল শেষে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দৌড়ে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়ের দিকে আসেন এবং চারপাশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে মোড় অবরোধ করেন।

এ সময় আটকে পড়া যাত্রী এবং বাস চালকদের উদ্দেশ করে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা যেসব যাত্রী ও গাড়িচালক ভাইয়েরা ভেতরে বসে আছেন, আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্যই আমাদের আন্দোলন। আপনাদের যাদের কোনো কোটা নেই, আপনারা সন্তানেরা যেন পড়ালেখা করে চাকরি পায়, কোনো কোটার কারণে বঞ্চিত না হয় সেজন্যই আমাদের এই আন্দোলন।

‘দয়া করে আমাদের সহযোগিতা করুন। আপনার ছেলে যখন কোটা না থেকেও চাকরি পাবে তখনকার আনন্দ চিন্তা করে আজকের সামান্য এই কষ্টটুকু সহ্য করুন।’

ওদিকে বেলা আড়াইটা থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা কলেজসহ আশপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর তিতুমীর কলেজসহ আশপাশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মহাখালীতে অবরোধ করার কথা রয়েছে।

এর আগে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভাগ, হল ও ইনিস্টিটিউটের ব্যানারে অবস্থানে যোগ দেন। এরপর এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে শাহবাগে এসে মোড় অবরোধ করেন।

আর বিজ্ঞান অনুষদের হলগুলো তাদের হল থেকে চানখাঁরপুল আর ঢাকা কলেজসহ আশপাশের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সায়েন্স ল্যাব অবরোধ করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘কোটা ছেড়ে কলম ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কামব্যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এর আগে শনিবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়করা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবসহ বিভিন্ন মহাসড়ক ও সড়ক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা তাদের এই অবরোধ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

এদিকে রোববার দুপুরে গণভবনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লেখাপড়া বাদ দিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার আন্দোলন করছে। যারা এর আগে আন্দোলন করেছিল, তারা আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় কত পাস করত, এখন কত করছে? এটা সাবজুডিস ম্যাটার, আদালতে বিচারাধীন।’

তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা বাদ দিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা সময় নষ্ট করছে। এ আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো- পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা–সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।


আমার বার্তা/এমই