জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে সবাইকে একজোট হতে হবে: ড. ইউনূস
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২৩ | অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ প্রতিবেদক:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা এটিকে মুছে দিয়ে আগের অবস্থায় ফেরানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই অপচেষ্টা বিদেশ থেকেও চলছে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি ‘জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে’ রাজনৈতিক মতাদর্শ পাশে রেখে সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জগদ্দল পাথর আমাদের বুক থেকে সরাতে পারলাম। আমরা বিজয় উৎসব করলাম। কিন্তু আমাদের এই মুক্তি, আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে এটাকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাই দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে একজোট থাকতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অক্টোবরে সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন হয়েছে। আমরাও পূজার আনন্দে শরিক হয়েছিলাম। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। দেশকে নতুন করে অস্থির করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে আরেক বাংলাদেশের কাহিনী রচনা করে যাচ্ছে। সারাক্ষণ নানা রূপে তারা এটা করে যাচ্ছে। এটা যে এখন এক দেশের মধ্যে আছে তা নয়, বিশেষ বিশেষ বড় দেশের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে।'
আমাদের এই অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা এটাকে মুছে দিতে চায়, এটাকে নতুন ভঙ্গীতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়। আমাদের এখানে নাকি ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটছে, তা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষার জন্য তারা এগিয়ে আসতে চায়। এখন সেগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা বা বাস্তবতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। এটা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় না। জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়,' যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ নিয়ে সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করলাম, তারা এটাকে মুছে দিয়ে আগেরটায় ফিরে যেতে চায়। মুখে বলছে না যে আগেরটা, কিন্তু ভঙ্গী হলো আগেরটা ভালো ছিল। তাদের শক্তি এত বেশি যে তারা মানুষকে এর ভেতরে ভেড়াতে পারছে। তাদের কল্পকাহিনীর কারণে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে যে এটা কী ধরনের সরকার হলো।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা বারবার তাদের বলছি যে আপনারা আসেন এখানে, দেখেন, এখানে কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু না, তারা ওখান থেকেই কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের সাড়া দুনিয়াকে বলতে হবে যে, আমরা এক, আমরা যেটা পেয়েছি সেটা একজোট হয়ে পেয়েছি, কোনো মতবাদের কারণে পাইনি, ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি, যারা আমাদের ওপর চেপে ছিল, তাদের উপড়ে ফেলেছি। এটাই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে, সবাই মিলে যেন এটা করতে পারি। আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা মস্ত বড় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, আপনারা সবাই ভালো বোঝেন। সবাই মিলে আমরা একজোট হয়ে যেন কাজটা করতে পারি, সবাই একত্র হয়ে বললে একটা সমবেত শক্তি তৈরি হয়, এই সমবেত শক্তির জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা।
বিকেল ৪টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শুরু হয়।
এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন অংশ নেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে অংশ নেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম।
এছাড়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জেনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর ও রাশেদ খান, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু ও আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ খেলাফত মসলিসের মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আবদুল বাসিত আজাদ ও জাহাঙ্গীর হোসেন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, এনপিপি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।
এর আগে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলাপ করতে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় যমুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিনি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের কথা জানান। তিনি বলেন, এসব বৈঠকের উদ্দেশ্য সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
আমার বার্তা/এমই