বাংলাদেশে সাংবাদিকদের উপর হামলা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে: আরএসএফ
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

বাংলাদেশে সম্প্রতি গণমাধ্যম কর্মীদের উপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)।
মুক্ত সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে সাংবাদিকদের উপর লাঠি এবং হাতুড়ি দিয়ে আঘাতসহ গুরুতর হামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং নিউজরুমে আক্রমণ চালানো হচ্ছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আরএসএফ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ অফিসার এবং রাজনৈতিক কর্মীরা মূলত এই হামলাগুলো চালাচ্ছে। তারা প্রতিটি অপরাধীর বিচার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষর প্রতি আহ্বান জানায়।
আরএসএফ-এর দক্ষিণ এশিয়া ডেস্ক প্রধান সিলিয়া মেরসিয়ের বলেন, ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর গণমাধ্যমের পরিবেশে উন্নতির আশা সৃষ্টি হলেও, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “গত কয়েক দিনে সাংবাদিকদের উপর একের পর এক আক্রমণ মিডিয়ার বিরুদ্ধে সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। রিপোর্টিং করার সময় আক্রমণ করা হচ্ছে, লেখার জন্য শারীরিকভাবে প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে, এবং বিক্ষোভকারীরা নিউজরুমে হামলা করছে।”
বেশ কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রকাশিত প্রতিবেদন মুছে ফেলার দাবিতে হামলা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে হামলার পাশাপাশি সাংবাদিকদের কাজে পুলিশের বাধা প্রদান ও আক্রমণ হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র আনুমানিক ২০ জন সমর্থক সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এটিএন নিউজ-এর জাভেদ আক্তারকে আক্রমণ করে। এনটিভির হাসান জাবেদ এবং দীপ্ত টিভির আজিজুল ইসলাম পান্নু আক্তারকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসলে তাদেরও আক্রমণ করা হয়। সাংবাদিকরা ওই সময়ে একটি মামলায় রায় কাভার করতে গিয়েছিলেন।
‘একদিন পরেই, ইন্ডিপেন্ডেন্ট২৪ টিভি’র মোহাম্মাদ ওমোর ফারুক, একাত্তর টিভি’র সাইয়েদ মাইনুল আহাসান মারুফ এবং অন্যান্য সাংবাদিকদের উপর বিক্ষোভকারীরা হামলা করে। ঐ সময় তারা ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ও স্মৃতি জাদুঘর ভাঙ্গার ঘটনা কাভার করছিল। পুলিশ কোন হস্তক্ষেপ করেনি’ উল্লেখ করা হয় আরএসএফ’র প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ৬ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয় পুলিশের হাতে। দ্য রিপোর্ট লাইভ-এর কাওসার আহমেদ রিপন, কালের কণ্ঠ থেকে আসিফ-উজ জামান এবং মুহাম্মাদ মাহাদি, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর আজহার রাকিব, জাগো নিউজ-এর মোহাম্মাদ রাদওয়ান এবং ব্রেকিং নিউজ-এর শিমুল খানকে পুলিশ লাঠি দিয়ে পিটায়, ঘুষি এবং লাথি দেয়। আহত সাংবাদিকরা জানায়, তাদের প্রেস কার্ড দেখানো সত্ত্বেও পুলিশ তাদের ইচ্ছা করে হামলা করে।
‘ঢাকার বাইরে শরিয়তপুরে কয়েকজন সাংবাদিক তাদের কাজের জন্য নৃশংসতার মুখে পড়ে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি, সমকাল-এর প্রতিনিধি সোহাগ খানের উপর হাতুড়ি এবং ছুঁড়ি দিয়ে হামলা চালানো হয়। একটি ক্লিনিকের অবহেলা নিয়ে প্রতিবেদন করায় ক্লিনিকের মালিকের ভাই এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা আক্রমণ করে। অন্য তিনজন সাংবাদিক – নিউজ২৪ টিভি’র বিধান মজুমদার ওনি, বাংলা টিভি’র নয়ন দাস এবং দেশ টিভি’র শফিউল ইসলাম আকাশ সহকর্মীর সাহায্যে এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা তাদের উপরও হামলা চালায়।’
সহিংসতার এসব ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে মিডিয়া পেশাজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওাতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে আরএসএফ।
আমার বার্তা/জেএইচ