আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি, আশার বাণী শোনাতে পারেননি আসিফ নজরুল

শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি প্রদান

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ এবং বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে স্মারকলিপি দিয়েছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তবে উপদেষ্টা তাদেরকে আশার বাণী শোনাতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে জাতীয় সচিবালয় এলাকায় অবস্থান নেন। তারা আওয়ামী লীগসহ দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও জুলাই গণহত্যাসহ সব অপকর্মের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম থেকে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করছেন।

এরপর শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এসব দাবি জানাতে সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে ভেতরে যায়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা, জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিক আল আরমান ও রাফিদ এম ভুইয়া।

পরে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে প্রধান ফটকে বিকাল ৪টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্য মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে ইতিবাচক কিছু বলবেন, এমন আশা ছিল। কিন্তু তিনি কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা দাবি করেন মুসাদ্দিক। তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনায় মনে হয়েছে সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দূতাবাসগুলোর প্রশ্নের মুখোমুখি হাতে চায় না বলেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করছে না। কিন্তু এটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। ৫ আগস্ট জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে, এ দেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তাই কালবিলম্ব না করে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।

মুসাদ্দিক আরও বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, গণ–আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। আরেক জুলাই গড়ে তুলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে বাধ্য করতে হবে। আমরা শিগগিরই দাবি আদায়ে মাঠে নামব।’ শিগগরিই কর্মসূচি ঘোষণা করার কথাও জানান এই শিক্ষার্থী।

এ সময় সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, সংবিধানের ১৩২ ধারা নিয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে। এই ধারা বাতিলের জন্য উপদেষ্টাকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ধারাটি হলো সরকারি কর্মকর্তাদের নামে মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। এ ক্ষেত্রে বিসিএস কর্মকর্তা হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর পুলিশ হলে আইজির অনুমতি লাগে। আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত অনেক মামলার আবেদন হয়েছে। কিন্তু সেগুলো থানায় যায়নি। তাই এই ধারায় সংশোধনী বা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাদিক আল আরমান বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ গর্তে ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা দেশের আনাচকানাচে তাদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। সে জন্য আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে।

স্মারকলিপিতে কী আছে?

আইন উপদেষ্টার কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে তারা লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যৌথ নির্দেশনায় এদেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো হয়েছে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ, যার ফলে দুই সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং বহু মানুষ এখনও পঙ্গু ও নিখোঁজ। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই গণহত্যার বিচার এখনও শুরু হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে চরম ধীরগতির, প্রতিহত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে। বিচারহীনতার এই ধারাবাহিকতা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৩২ ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে, যা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি গ্রহণের বিধান দেয়। এই ধারা বর্তমানে রাষ্ট্রীয় খুনিদের বিচার এড়ানোর আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়া বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বহু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। হাজার হাজার ভুক্তভোগী এখনও মামলা ও হয়রানির মুখোমুখি, অনেক নিরীহ নাগরিককে গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে, যাদের অধিকাংশের নামই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা মামলা ও মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত।

স্মারকলিপিতে তারা যেসব দাবি জানিয়েছেন সেগুলো হলো-

১. ফৌজদারি কার্যবিধি ১৩২ ধারা অবিলম্বে বাতিল বা সংস্কার করতে হবে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা দায়মুক্তি না পান।

২. আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার, শাপলায় সংঘটিত গণহত্যা, পিলখানা, ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ মার্চসহ সব হত্যাকাণ্ডের দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

৩. আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলের যেসব নেতা বিগত তিন নির্বাচনে ক্ষমতায় ছিলেন তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

৪. বিগত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

৫. গণহত্যা তদন্তে অসহযোগিতাকারী সব প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬. এখনো গুম থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান দিতে হবে এবং আয়নাঘর ও গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।

৭. বিগত জুলাই আন্দোলনে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলোসহ গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দায়ের করা ষড়যন্ত্র, প্রহসন এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক সব মামলা বাতিল করতে হবে।

৮. ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নামক দলটি বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে নিজস্ব স্বার্থে এবং জনগণের ওপর চালিয়েছে ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন। এই মুহূর্তে দলটিকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল করা না হলে ভবিষ্যতে দেশকে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আশাবাদী, আপনি এই সংকটময় সময়ে সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। ইতিহাসের আদালতে আপনি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।


আমার বার্তা/এমই