চিকিৎসক, প্রতিবন্ধীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২ বছর বাড়ছে
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

চিকিৎসক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স আগের মতো সাধারণ প্রার্থীদের থেকে দুই বছর বেশি (৩৪ বছর) নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে সব পর্যায়ের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বয়স ৩২ বছর করায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, চিকিৎসক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বয়সের বিশেষ সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রেও বয়সের বিশেষ সুবিধা পাওয়া প্রার্থীরা বঞ্চিত হন।
এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগে দেখা দেয় জটিলতা। তবে এ পরিস্থিতিতে ফের অধ্যাদেশ সংশোধন করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সরকারি চাকরির সব স্তরে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করে গত বছরের ১৮ নভেম্বর ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’ জারি করে সরকার।
অধ্যাদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সব ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৩২ বছর। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতাবহির্ভূত সব সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৩২ বছর।
এ অধ্যাদেশ জারির আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা, চিকিৎসক ও প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর ছিল। এছাড়া পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কিছু পদে (কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট) সরাসরি নিয়োগের জন্য বয়সসীমা ৩৫ ও ৪০ বছর নির্ধারিত ছিল।
কিন্তু নতুন অধ্যাদেশ জারির পর সাধারণ প্রার্থীদের মতো এসব পদের প্রার্থীরও চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর হয়। তারা বয়সের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রার্থীদের চেয়ে যে বাড়তি সুবিধা পেতেন তা বাতিল হয়ে যায়।
এই অসুবিধা নিরসনে বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থা ছাড়াও চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে প্রস্তাব আসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। চিকিৎসকদের ইন্টার্ন করার পর চাকরিতে প্রবেশ করতে হয় বলে তারা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্যদের থেকে দুই বছর বাড়িয়ে ৩৪ বছর করতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দাবি জানান। এরপর সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়।
পিএসসি অধ্যাদেশে নতুন একটি ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। তারা প্রস্তাবে জানায়, ‘এই অধ্যাদেশ জারির প্রাক্কালে যেসব সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের কোনো পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৩ বছর কিংবা তদূর্ধ্ব কোনো বয়সসীমা নির্ধারিত আছে, সেসব বয়সসীমা অপরিবর্তিত ও বহাল থাকবে।’ অধ্যাদেশ সংশোধন করে বিষয়টি ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে কার্যকর করার সুপারিশ করেছে পিএসসি।
কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চাহিদার ভিত্তিতে পিএসসি পরে আরও জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, চিকিৎসক এবং প্রতিবন্ধীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স সাধারণ প্রার্থীদের থেকে বেশি হওয়া উচিত। এর বাইরে পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কিছু পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য বয়সসীমা আগের মতো ৩৫ ও ৪০ বছর রাখা যেতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, পিএসসির প্রস্তাব পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিকিৎসক এবং প্রতিবন্ধীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৩৪ বছর করার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কিছু পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য বয়সসীমা আগের মতো ৩৫ ও ৪০ বছর রাখার বিষয়ে পিএসসি যে মত দিয়েছে সেটাতেও একমত পোষণ করেছে মন্ত্রণালয়।
তবে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়। অতীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বয়স নিয়ে নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক্ষেত্রেও বয়স দুই বছর বাড়ানো হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ওপর ছেড়ে দিতে চায় মন্ত্রণালয়। তাই সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়া শিগগির উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক উপস্থাপন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ‘সরকারি অফিসের কম্পিউটার পারসোনেল নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯’ এ বয়সসীমার বিষয়ে বলা হয়েছে- পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক, উপ-পরিচালক, উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৪৫ বছর। উপ-পরিচালক/সিস্টেম ম্যানেজার পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে বয়সসীমা ৪৫ বছর। এছাড়া মুখ্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট, সিনিয়র রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর বয়সসীমাও হবে ৪৫ বছর।
একই সঙ্গে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স সিস্টেম অ্যানালিস্টের ৪০ বছর, সিনিয়র প্রোগ্রামারের ৪০ বছর, অপারেশন ম্যানেজারের বয়স ৪০ বছর, সহকারী সিস্টেম অ্যানালিস্টের বয়স ৩৫ বছর, প্রোগ্রামারের ৩৫ বছর, কম্পিউটার সুপারভাইজারের ৩৫ বছর এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর ৩৫ বছর নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু গত বছরের ১৮ অক্টোবর সবার বয়স ৩২ বছর করে অধ্যাদেশ জারির পর তাদের এই সুবিধা বাতিল হয়ে যায়।
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবিতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন আন্দোলনরতরা। তাদের সরিয়ে দিতে কাঁদানো গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এরপরও তারা সেখানে অবস্থান নেন। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।
পরে ওইদিনই চাকরিপ্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সাবেক সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। কমিটি ৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের প্রতিবেদন দাখিল করে।
এ কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ ও নারীর ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু পরে বিচার-বিশ্লেষণ করে সরকার ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত দেয়।
আমার বার্তা/জেএইচ