শুল্ক জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পার্সেল পাঠানো বন্ধ
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রে ছোট প্যাকেজের ওপর কর অব্যাহতি প্রত্যাহারের পর শুল্ক জটিলতায় বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো বন্ধ রেখেছে।
২৮ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো বন্ধ রয়েছে। ওই দিনই শেষ হয় মার্কিন কর্তৃপক্ষের দেওয়া করমুক্ত সুবিধা, যা ১৯৩৮ সালে ‘ডি মিনিমিস’ নিয়মে ছোট প্যাকেজের ক্ষেত্রে চালু ছিল। ২৯ আগস্ট থেকে ৮০০ ডলারের কম মূল্যের আমদানিকৃত পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ এবং কাস্টমসের কড়াকড়ি শুরু হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি ও বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কর অব্যাহতি বাতিলের কারণে খরচ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় হাজারো ছোট ব্যবসায়ী ও পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে প্যাকেজ পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশে অনলাইন বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা প্রবাসী বাজারের ওপর নির্ভর করতেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কাছে পণ্য পাঠিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
ঢাকার মিরপুরের অনলাইন ক্রাফট হাউস ‘ফিনারি’র মালিক ড. চিং বলেন, “এই মাসের শুরু থেকে যত পার্সেল পাঠানোর চেষ্টা করেছি, কোনোটি পাঠানো সম্ভব হয়নি। ডাকঘরে জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পার্সেল আর গ্রহণ করা হচ্ছে না।”
বাংলাদেশ একমাত্র দেশ নয়। এএফপি জানায়, কর ছাড় শেষ হওয়ার পর ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) জানিয়েছে, ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাপী ডাক পার্সেল ট্র্যাফিক এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৮১ শতাংশ কমে গেছে। অন্তত ৮৮টি দেশ তাদের পরিষেবা স্থগিত করেছে অথবা বড় পরিসরে কমিয়েছে।
ঢাকা জিপিওর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন শুল্ক ব্যবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যদিও সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই, তবে জিপিও থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০টি পার্সেল বিদেশে পাঠানো হয়, যার এক-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রগামী।
পরিদর্শনে দেখা গেছে, জিপিওর আন্তর্জাতিক পার্সেল প্যাকেজিং বিভাগের লাইনে কোনো ভিড় নেই। কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো বন্ধ থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন পুরান ঢাকার কাপড় ব্যবসায়ী তারেক আজিজ। তিনি বলেন, “বিদেশি গ্রাহকদের কাছে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ পাঠাতে না পারায় অনেক অর্ডার বাতিল করতে হয়েছে। বেসরকারি কুরিয়ারে খরচ তিনগুণ বেড়ে গেছে। এই হারে ব্যবসা টেকানো সম্ভব নয়।”
ব্যক্তিগত প্রেরকেরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাজধানীর পান্থপথের বাসিন্দা প্রলয় কুমার দের ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, “শীতের পোশাক, শুকনো খাবার, বই পাঠাতে পোস্ট অফিসই ছিল সাশ্রয়ী ভরসা। বেসরকারি কুরিয়ার এত ব্যয়বহুল যে তা সামর্থ্যের বাইরে।”
ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ডাক পরিষেবা) পারভীন বানু জানান, “আমরা মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি, আলোচনা ফলপ্রসূ হলে আবারও পার্সেল সার্ভিস চালু করা যাবে।”
এদিকে, জিপিওর মাধ্যমে পাঠানো বন্ধ থাকলেও ডিএইচএল ও ফেডেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলো উচ্চ খরচে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিয়মিত গ্রাহক দীপঙ্কর রায় জানান, দুই কেজি পার্সেল আগে জিপিওর মাধ্যমে ২–৩ হাজার টাকায় পাঠানো যেত, এখন বেসরকারি কুরিয়ারে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭–১০ হাজার টাকা।
ফেডেক্সের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১০০ ডলারের নিচে পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক নেই। তবে এর বেশি হলে ৩০ শতাংশ কর প্রযোজ্য। ডিএইচএলের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রাহকদের এখন প্রতিটি চালানেই আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হচ্ছে, ফলে পার্সেল পাঠানোর হার কমে গেছে।
আমার বার্তা/জেএইচ