গণভোট বিতর্ক রেখেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

গণভোট, নোট অব ডিসেন্টসহ নানা বিতর্ক চলমান রেখেই ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সুপারিশে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত আইন প্রণয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। এই সময়ের মধ্যে গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরিষদ ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।
এ ছাড়া, সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। গণভোটে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি বিষয়ের ওপর জনগণের মতামত নেওয়া হবে। এ জন্য সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ নামে একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করবে।
গণভোটে ব্যালটে একটিমাত্র প্রশ্ন থাকবে— ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ এবং ইহার তফসিল-১ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’
সুপারিশ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। পরিষদে কোরামের জন্য অন্তত ৬০ সদস্যের উপস্থিতি আবশ্যক থাকবে। এই পরিষদ সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
সুপারিশে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের অনুমোদন অপরিহার্য। তাই গণভোট আয়োজন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন এবং সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করাকে প্রয়োজনীয় মনে করছে কমিশন।
ঐকমত্য কমিশন সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না করলেও বলেছে, আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘যথোপযুক্ত সময়ে’ অথবা নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। গণভোটের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। তবে সময় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে নেবে।
গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ‘হ্যাঁ’ এলে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যারা ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদের আলোকে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে। যদি ‘না’ ভোট বেশি হয়, তবে সংস্কার প্রক্রিয়া সেখানেই শেষ হবে।
পরিষদ প্রথম বৈঠকে সভাপতি ও উপ-সভাপতি নির্বাচন করবে। সংবিধান সংস্কারের কোনো প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের প্রয়োজন হবে।
সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। এই উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিফলন হিসেবে কাজ করবে। তাই সংস্কার অনুমোদনের জন্য আর কোনো আলাদা ভোট বা অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।
বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট প্রসঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, এসব বিষয় জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করবে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, কমিশনের হাতে দুটি বিকল্প প্রস্তাব রয়েছে— ১. সরকার একটি আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করবে; ২. ঐ আদেশের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত ৪৮টি বিষয় বিল আকারে প্রস্তুত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, গণভোটে যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, তাহলে বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহযোগিতা করবে, তবে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
সংবিধান সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশন উভয়েই ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ করেছে। গণভোটে জনগণের সম্মতি পেলে জাতীয় সংসদ গঠনের পর ২৭০ দিনের মধ্যে এবং অতিরিক্ত ৪৫ দিনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
কমিশন জানিয়েছে, যেসব প্রস্তাব অধ্যাদেশ বা অফিস অর্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব, সরকারকে সেগুলো দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আমার বার্তা/জেএইচ
