নীরবে কানাডা গেলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

নিয়োগের প্রায় পাঁচ মাস পর অবশেষে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। গত ২২ মে থেকে তিনি ছুটিতে ছিলেন। বেশ কিছু প্রচলিত প্রথা না মেনে অনেকটা নীরবে তিনি কানাডা গেলেন বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) তিনি টরন্টো পৌঁছান এবং পরে অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগ দেন।
সূত্র জানায়, যাওয়ার আগে তিনি সাক্ষাৎ পাননি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের। এমনকি পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গেও তার আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। শুধু নতুন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের ২৭তম পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন। দায়িত্ব নেওয়ার আট মাসের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকার তাকে পদ থেকে সরিয়ে ছুটিতে পাঠায়। তার আচমকা পদত্যাগ বা সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সরকার এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি।
ওই সময় পররাষ্ট্র সচিবকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তখন বলেছিলেন, ‘অপসারণের কোনো বিষয় নেই। পররাষ্ট্র সচিব বিভিন্ন কারণে নিজে থেকে হয়তো সরে যেতে চান এবং আমরা তাকে সরে যেতে দিচ্ছি।’
‘ছুটিতে যাচ্ছেন না কি চাকরি ছাড়ছেন’— এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘উনি চাকরি ছেড়ে দেবেন কেন? উনি তো চাকরিতে আছেন। উনি যখন চাকরিতে আছেন, দায়িত্ব পরিবর্তন হবে।’
পরে জারি করা সরকারি আদেশে বলা হয়, ‘জনাব মো. জসীম উদ্দিন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব ত্যাগ করায় জনাব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী, সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিবের দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পাদন করবেন।’
এরপর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামকে দেশের পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
চীন, কাতার ও গ্রিসে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পেশাদার কূটনীতিক জসীম উদ্দিনকে শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথা শোনা গেলেও গত জুনের প্রথম সপ্তাহে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে অটোয়ায় এগ্রিমো (নিয়োগের প্রস্তাব) পাঠায় সরকার। কিন্তু কানাডা সরকারের সম্মতি পেতে প্রায় পাঁচ মাস লেগে যায়। এই সময়টাতে তিনি ছুটিতে ছিলেন।
এত দেরির কারণ জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘সাধারণত এত সময় লাগে না। তবে কোনো কর্মকর্তাকে ঘিরে সমালোচনা থাকলে, সে বিষয়ে বিস্তারিত ইনভেস্টিগেশন করার পরেই কোনো দেশ তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করে। জসীম উদ্দিনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। শেষমেশ কানাডা সরকার তাকে গ্রহণ করেছে, এটিই স্বস্তির বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও এখনো তিনি কানাডা সরকারের কাছে নিজের পরিচয়পত্র পেশ করেননি, তবুও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। অফিসও শুরু করেছেন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত কোনো রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার দায়িত্ব নিতে যাওয়ার আগে সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যান, এটি প্রচলিত সৌজন্য রীতি।
সেগুনবাগিচার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ নেওয়া আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ সৌজন্য। কারণ, রাষ্ট্রদূতকে সাধারণত তিনি নির্দেশনা দেন। এটা নিয়মের অংশ।’
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের অন্তত দুজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, কানাডায় বাংলাদেশের নতুন হাইকমিশনার জসীম উদ্দিনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কোনো বৈঠক হয়নি।
এছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকেও জানানো হয়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও তার কোনো অফিসিয়াল বৈঠক হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ‘হাইকমিশনার জসীম উদ্দিন যে সময়টাতে গেছেন, সে সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উগান্ডা সফরে ছিলেন। তিনি ফেরার পরে অন্য কোনোভাবে দেখা হয়েছে কি না জানি না। তবে অফিসিয়ালি কোনো সাক্ষাৎ হয়নি।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কানাডা যাওয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হাইকমিশনার জসীম উদ্দিনের সাক্ষাৎ না হওয়াটা দৃষ্টিকটু। কারণ, কিছু নর্মস তো থাকেই।’
তবে সব মিলিয়ে গত কয়েক মাসে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পেশাদার কূটনীতিক জসীম উদ্দিন গেছেন, তাতে তার হারানোর কিছু নেই বলেও উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
জানা যায়, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে জসীম উদ্দিনের অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সহকর্মীদের আশা, জীবনের এই শেষ দায়িত্বকালটি তিনি সম্মানজনকভাবে শেষ করতে পারবেন।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কানাডায় হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কূটনীতিক নাহিদা সোবহান। গণঅভ্যুত্থানের এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি জর্ডান থেকে ঢাকা হয়ে কানাডায় পৌঁছে দায়িত্ব নেন।
আমার বার্তা/এমই
